পদ্মায় ৫ শ্রমিক নিখোঁজ, তীব্র স্রোতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ

নিখোঁজ শ্রমিক রুবেল হোসেনের মা ও স্বজনদের আহাজারি। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের বাছের খার ডাঙ্গী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
নিখোঁজ শ্রমিক রুবেল হোসেনের মা ও স্বজনদের আহাজারি। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের বাছের খার ডাঙ্গী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

তীব্র স্রোতের কারণে সদরপুরে পদ্মা নদীতে নামতে না পারায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ পাঁচ শ্রমিকের উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ উদ্ধার অভিযানে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট থেকে ফায়ার সার্ভিসের ছয় সদস্যের একটি ডুবুরি দল এসেছিল। কিন্তু নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ডুবুরি দলের সদস্যরা পদ্মায় নামতে পারেননি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

ছয় সদস্যের ডুবুরি দলের লিডার ফজলুর রহমান বলেন, আজ বেলা তিনটার দিকে তাঁরা সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের শয়তানখালী এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে এসে পৌঁছান। ট্রলারে করে যে জায়গায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে, সেখানে যান। কিন্তু নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় তাঁদের পক্ষে এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।

ফজলুর রহমান বলেন, তাঁদের কাছে যে ধরনের উদ্ধারসামগ্রী ছিল, তা দিয়ে এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, ইউএনও সার্বক্ষণিক তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁদের কাজ তদারক করেছেন।

ইউএনও পূরবী গোলদার বলেন, পদ্মা নদীর ওই অংশে যে স্রোত ছিল, তা ভেদ করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার সক্ষমতা ওই ডুবুরি দলের ছিল না। তিনি বলেন, নৌকাডুবিতে পাঁচ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে নেমে নতুন করে কোনো দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেওয়া সমীচীন মনে হয়নি বলে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ২৬ জনকে নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারটি সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের শয়তানখালী থেকে চরনাছিরপুরের দিয়ারার চরে যাচ্ছিল। পথে নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকা থেকে ২১ জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও ৫ জন শ্রমিক তলিয়ে যান।

নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন চুয়াডাঙ্গার মো. শাহাবুর (৩৫), শিলন মিয়া (৩৮), আবদুর রাজ্জাক হোসেন (৪০) এবং সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের বাছের খার ডাঙ্গী গ্রামের মো. সহিদ (১৬) ও রুবেল হোসেন (২৭)।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢেউখালীর নওয়াব মোল্লার ঘাট থেকে প্রথমে ১৬ জন শ্রমিক, শয়তানখালী ঘাট থেকে ১০ জনসহ মোট ২৬ জন শ্রমিককে নিয়ে বাদাম তোলার জন্য জমি ও ট্রলারের মালিক চর শালিপুরের কাজীকান্দা গ্রামের কৃষক মো. লালন ফকির চরনাছিরপুর ইউনিয়নের দিয়ারার চরে যাচ্ছিলেন।

ওই নৌকায় ছিলেন চুয়াডাঙ্গার শ্রমিক মো. আমজেদ আলী (৩২)। তিনি বলেন, শয়তানখালী ঘাট থেকে নৌকাটি ছাড়ার পাঁচ মিনিট পরই তীব্র স্রোতের মধ্যে পড়ে ডুবে যায়।

ইউএনও পূরবী গোলদার বলেন, যে নৌকা ডুবে গেছে, সেটি ছোট আকারের একটি মাছ ধরার নৌকা। নৌকাটির ধারণক্ষমতা ছিল ১০ থেকে ১২ জন। কিন্তু নৌকায় পার হচ্ছিলেন ২৬ জন। তীব্র স্রোতের পাশাপাশি অধিক যাত্রীর কারণে নৌকাটি পদ্মায় ডুবে যায়।

সদরপুর থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নৌকার মালিক মো. লালন ফকিরকে আটক করা হয়েছে।