স্বাস্থ্য-পরিবেশ সুরক্ষাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে হবে

করোনার কারণে আমাদের আমাদের জীবন ও জীবিকার ওপরে বড় ধাক্কা এসেছে। দেশে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশে পরিণত হয়েছে। করোনার কারণে অবশ্য পরিবেশে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সুন্দরবন ও উপকূলের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ফলে সামনের দিনের বড় চ্যালেঞ্জ হবে স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে।

পরিবেশবাদীদের জোট প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে আয়োজন করা হয়।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিকে জীবন ও জীবিকাকে মুখোমুখি করা হয়েছে। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে মুখোমুখি না করে সমান্তরাল হিসেবে দেখতে হবে। জীবনকে না বাঁচালে জীবিকা হবে না। দুটিকেই আমরা কীভাবে দক্ষভাবে করতে পারি, তা খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিভিত্তিক উন্নয়নকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে।’

হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের মধ্যে মানুষের আয় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন ভাবনায় নতুন করে ভাবতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা সাফল্যকে কিছু তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনা ধাক্কা থেকে আমরা বুঝলাম দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি বোঝার ক্ষেত্রে বড় ফাঁক রয়ে গেছে। আমরা ধরে নিয়েছি দারিদ্র্যসীমার ওপরে যারা আছে, তাদের মধ্যেও ভাগ করা দরকার। মধ্য আয়ের একটি বড় অংশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে। ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র দিয়ে বুঝতে অভ্যস্ত। এর সঙ্গে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করতে হবে। প্রায় ৪৩ শতাংশ জনগণ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।’

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী তহবিল চাচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সবচেয়ে বড় অবলম্বন হচ্ছে সুন্দরবন। কিন্তু এই বন ধ্বংস করার মতো অনেকগুলো প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিয়েছে। করোনাকালে যারা দুর্বৃত্ত হিসেবে পরিচিত, তাদের দেশ থেকে বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এক টাকার পণ্য কয়েক শ টাকায় কেনার ব্যবস্থা রেখে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের আট কোটি গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা। আর তৈরি পোশাকমালিকদের দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ঋণের টাকায় এখন করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু এই দুই সংস্থার পরামর্শেই দেশের স্বাস্থ্য খাতকে বেসরকারি উদ্যোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা করোনার আগে যেভাবে উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি, তাতে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে একের পর এক বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। শিল্পের কারণে বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ শহরে পরিণত হয়েছে। ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের বসবাসের অন্যতম অনুপযোগী শহর।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময়ে আমরা পরিবেশের কিছু উন্নতি হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাকে আমলে নিয়ে আমাদের উন্নয়ন চিন্তাকে নতুনভাবে ভাবতে হবে। প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। আম্পানের আঘাত থেকে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে এই শিক্ষা দিয়ে গেছে।’