দেশে অসুস্থতা নিরসনে সরকারি সহায়তা কমছে

চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ বলেছে, বাংলাদেশে অসুস্থতা নিরসনে সরকারি সহায়তা ক্রমশ কমছে। স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতেই অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এ জন্য বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার অনলাইনে ‘করোনায় উন্মোচিত ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ এসব দাবি জানায়। গত ২১ মে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।

সংগঠনের সদস্যসচিব শাকিল আখতার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। এই দুর্যোগে মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার নিজেদের দায়িত্ব আড়াল করতে চিকিৎসক ও জনগণকে মুখোমুখি করেছে।

বিগত বছরে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে অন্যান্য খাতে বরাদ্দের তুলনা করে ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ বলে, ‘গত ১৮ বছরে স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দের দিকে তাকালে দেখা যায়, মোট জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার বরাবরই অবহেলিত। কিন্তু মোট বাজেটের পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে।’ তারা আরও জানায়, এক যুগ আগে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং গত অর্থবছরে তা ছিল ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।

ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, গত ১৮ বছরে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বরাদ্দের বার্ষিক গড় ৫৯৪.৭৯ টাকা। বাংলাদেশে অসুস্থতা নিরসনে সরকারি ভূমিকা যা-ও ছিল, এখন তা ক্রমশ কমছে। জাতীয় বাজেটে কম বরাদ্দ ও ব্যক্তির খরচ বেশ হওয়ায় প্রায় ৬০ লাখ লোক প্রতিবছর স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। সংগঠনটি আরও জানায়, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমানো হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে বেশ কিছু দাবি জানিয়ে চিকিৎসকদের এই সংগঠনটি বলেছে, স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ ও জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে, অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ খাতে বাজেটের এক–তৃতীয়াংশ বরাদ্দ দিতে হবে, সরকারি হাসপাতালে সব চিকিৎসা বিনা মূল্যে, সরকারি হাসপাতালে ইউজার ফি বাতিল, উপজেলা পর্যায়ে ৫০ এবং জেলা পর্যায়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, জনবল বাড়ানো, মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত, জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা, গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করতে হবে।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে আরও কিছু দাবি জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে আছে, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সরকারের চিকিৎসার সব দায় নেওয়া, বেসরকারি হাসপাতালেও বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা, মানসম্মত র‍্যাপিড টেস্টিং কিট উন্মুক্ত করা, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আক্রান্ত এলাকা রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন কঠোর করা।

ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পেশাজীবী যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের আহ্বায়ক রশিদ ই মাহবুব, সাধারণ সম্পাদক কাজী রকিবুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম, মো. আবু সাঈদ, সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী, হারুনর রশীদ প্রমুখ।