ঢাকার জন্য 'ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন'

‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’; রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে লাগবে ১ টাকা ৩১ পয়সা। ৫ জুন। ছবি: শহীদুল ইসলাম
‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’; রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে লাগবে ১ টাকা ৩১ পয়সা। ৫ জুন। ছবি: শহীদুল ইসলাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ সার্ভিস। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে প্রথমবারের মতো রাজশাহী অঞ্চলের আম নিয়ে বিশেষ ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

রাজশাহী স্টেশনে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই বিশেষ ট্রেনের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক, পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম প্রমুখ।

বিকেল চারটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে। সেখানে মালবাহী ট্রেনটিতে আম উঠিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ, নারী সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম ও জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় রেলওয়ে (পাকশী) ম্যানেজার আসাদুল হক, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মো. আব্দুর রহিম, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ প্রমুখ।

রাজশাহী স্টেশনে উদ্বোধনকালে মেয়র খায়রুজ্জামান বলেন, উৎপাদনকারীরা যাতে ভালো দাম পান এবং ঢাকাবাসী যাতে ভালো আম খেতে পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগ। আম ছাড়াও সব ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, ডিমসহ কৃষিজাত পণ্য ঢাকায় স্বল্প খরচে নিয়ে যেতে পারবেন কৃষকেরা। এই ট্রেনের চাহিদা বজায় থাকলে আম মৌসুম ছাড়াও স্থায়ীভাবে চলাচল করার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, আজকে বিশেষ ট্রেন চালুর মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ীদের সব ধরনের কৃষিপণ্য স্বল্পমূল্যে পরিবহনের সুযোগ হলো।

পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য পরিবহনের। কৃষক, ব্যবসায়ীরা খুব নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে আমসহ কৃষিপণ্য পরিবহন করতে পারবেন। তাঁদের এই আশ্বাসটা আমরা দিতে চাই।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ট্রেনটিতে অনেক জায়গা। কিন্তু আজ প্রথম দিন বলে কম পণ্য গেল। তবু সেটা অনেক। এটা ধীরে ধীরে বাড়বে বলে তাঁর আশা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন জানান, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি বিকেল চারটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে যায়। তারপর বিভিন্ন স্টেশনে আমসহ ট্রেন আইনে বহনযোগ্য পণ্য তোলা হয়। প্রথম দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ হাজার কেজি, কাঁকনহাট স্টেশন থেকে ৫২০ কেজি, রাজশাহী স্টেশন থেকে ২ হাজার ৬৯৫ কেজি, সরদহ স্টেশন থেকে ৬০২ কেজি, আড়ানি থেকে ১ হাজার ১১০ কেজি আম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে ট্রেনে ওঠানো হয়েছে। আব্দুলপুর স্টেশন থেকে সবশেষ আম তুলে ট্রেনটির লোডিং শেষ হবে।

পশ্চিম রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ এই ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যখন ঢাকায় যাবে, তখন ট্রেনটির নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-২’। আর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফেরার পথে নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’। ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিন চলাচল করবে। প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল চারটায় ছেড়ে আসবে। রাজশাহীতে পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। এখানে ৩০ মিনিট থেমে ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে। এরপর ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১টায়। ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে। রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। এখানে ২০ মিনিট থেমে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে।

ট্রেনটিতে মোট ছয়টি ওয়াগন থাকবে। প্রতিটি ওয়াগনে ৪৫ হাজার কেজি আম নেওয়া যাবে। তবে শুধু আম নয়; সব ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, ডিমসহ কৃষিপণ্য, বাড়ির ফার্নিচার এবং রেলওয়ের আইনে পার্সেল হিসেবে বহনযোগ্য সব সামগ্রী বহন করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ট্রেনটি আমনূরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানি ও আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামবে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হবে। টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও এবং কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। এই স্থানগুলোতে পণ্যগুলো খালাস করা হবে। ফেরার পথে ট্রেনটি তেজগাঁও, টঙ্গী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী, চাটমোহর ও রাজশাহী স্টেশনে থামবে। তবে যাত্রাপথে কোথাও সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে তোলা হবে না। আমসহ অন্যান্য পার্সেল তুলতে কুলিদের জন্য ১ থেকে ২৫ কেজির জন্য ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রেনটিতে রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক কেজি আমের ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৩১ পয়সা। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন ছাড়ার আগে যে কেউ তাঁদের মালামাল বুকিং দিতে পারবেন।