ইন্টারনেটের ধীরগতিতে নাটোরে ভার্চ্যুয়াল আদালত স্থবির

ইন্টারনেটের ধীরগতি ও সরঞ্জাম–সংকটের কারণে নাটোরে ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো না হলে আগামী রোববার থেকে কয়েকটি আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নাটোরের অন্তত ২০ জন আইনজীবী ও আদালত–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ভার্চ্যুয়াল আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ইন্টারনেটের ধীরগতি ও সরঞ্জাম–সংকটের কারণে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজিরের কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১১ মে থেকে নাটোর জেলায় ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩১৮টি জামিনের আবেদন পড়ে। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে অন্তত ২০০টি আবেদনের শুনানি বিঘ্নিত হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার পরও ১২৯টিতে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ভার্চ্যুয়াল আদালত পরিচালনা স্থবির হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের সরঞ্জাম–সংকট অন্যতম বাধা। প্রায় আদালতে সরকারিভাবে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বিচারকেরা ব্যক্তিগত খরচে বিভিন্ন মুঠোফোন কোম্পানির ইন্টারনেট কিনে আদালত পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া আদালতের উপযুক্ত কম্পিউটার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, হেডফোন না থাকায় বিচারকদের ব্যক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঈদের আগে বিচারকেরা এসব বিষয়কে গুরুত্ব না দিলেও এখন তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিগত খরচে ভার্চ্যুয়াল আদালত চালাতে চাচ্ছেন না। এসব সমস্যার সমাধান না হলে রোববার থেকে কিছু আদালত ব্যক্তিগত খরচে ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম না–ও চালাতে পারেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বেশ কিছুসংখ্যক মামলার শুনানি হলেও আজ অবধি ‘আমার আদালত’ বাতায়নে ঢুকে এই আদালতে জামিনের আবেদন করা সম্ভব হচ্ছে না। নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নিজস্ব একটি ই-মেইল ঠিকানায় আবেদন জমা দিতে হচ্ছে। ওই মেইল থেকে আবেদনকারীদের শুধু শুনানির তারিখ ও লিংক সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে আইনজীবীরা ‘আমার আদালত’ বাতায়নে ঢুকে তাঁদের আবেদনের বিষয়ে কিছুই জানতে পারছেন না। আদালতের কর্মচারীদেরও বিচারকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তাঁর মেইলে ঢুকতে হচ্ছে। এতে গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে।

নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অল্প কিছুসংখ্যক মামলার শুনানি হয়েছে। তবে ‘আমার আদালত’ বাতায়নে ঢুকে এই আদালতেও জামিনের আবেদন করা যাচ্ছে না।

নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক শেখ জানান, ভার্চ্যুয়াল আদালতের পুরো কার্যক্রম ইন্টারনেটনির্ভর। অথচ নাটোরের বিচারাঙ্গনে ইন্টারনেটের গতি একেবারেই কম। এ কারণে আদালত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনজীবীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ভার্চ্যুয়াল কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। এতে বিচারপ্রার্থীরা যেমন কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তেমনি আদালতও আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা (নোটিফিকেশন) সরবরাহ করতে পারছেন না। বারবার ইন্টানেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শুনানি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি অনেক আইনজীবী তাঁদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আইনজীবী আজিম উদ্দিন জানান, তাঁর একটি মামলার শুনানির সময় সাতবার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে তিনি ও বিচারক উভয়েই বিরক্ত হয়েছেন। তিনি প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

আইনজীবী মুক্তার হোসেন জানান, তিনি ১৮ মে একটি জামিনের আবেদন করেন। ঈদের আগে তাঁকে শুনানির তারিখ জানানোই হয়নি। তাঁর আবেদনের কী অবস্থা, তা বাতায়নে উল্লেখ করার কথা থাকলেও তা উল্লেখ করা হয়নি। ২৭ মে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে শুনানি করতে সক্ষম হন।

একই সমস্যার কথা জানান আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন তালুকদার। তিনি বলেন, এ ধরনের ভার্চ্যুয়াল আদালত পরিচালনা করেও আইনজীবী ও বিচার–সংশ্লিষ্টরা করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে পারছেন না। কারণ ‘আমার আদালত’বাতায়নের অনেক কিছুই অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে তাঁদের আদালত–সংশ্লিষ্টদের সামনাসামনি দেখা–সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে। তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।