চুয়াডাঙ্গায় কাবিখা প্রকল্পের ১ হাজার ২৬৬ বস্তা চাল জব্দ, তদন্তে কমিটি

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি মহল্লায় এক ব্যবসায়ীর গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩০ কেজি ওজনের ১ হাজার ২৬৬ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে প্রশাসন। জব্দ চালসহ দুটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাজারে বেশি দামে বিক্রির জন্য সরকারি চালের বস্তা বদল করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে সাতগাড়ি এলাকায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান এই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলাম এবং থানা-পুলিশের সদস্যরা সহযোগিতা করেন।

ইউএনও সাদিকুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, সরকারি বিপুল পরিমাণ চাল গুদামজাত করা হচ্ছে, এমন খবরের ভিত্তিতে সাতগাড়ি এলাকায় চাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের দুটি গুদামে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগান লেখা ৩০ কেজি ওজনের ১ হাজার ২৬৬ বস্তা সরকারি চাল পাওয়া যায়। গুদামমালিক জানান, চালগুলো আলমডাঙ্গার খাদ্য ব্যবসায়ী অসীম কুমার সাহা ও গৌতম সাহার। তাঁরা গুদাম ভাড়া নিয়ে চালগুলো রেখেছেন। ঘটনাস্থল থেকেই তাঁদের (অসীম ও গৌতম) ফোন দেওয়া হলে একজন ধরেন এবং বলেন যে জব্দ চালের বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। ইউএনও আরও বলেন, গুদামমালিক ও চালের মালিকের বক্তব্য আলাদা হওয়ায় চালগুলো জব্দ ও গুদাম দুটি সিলগালা করা হয়েছে।

গুদামমালিক নজরুল ইসলাম এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, চালগুলোর মালিক আলমডাঙ্গার অসীম কুমার সাহা ও গৌতম সাহা। আজ সোমবার সকালে চালগুলো ট্রাকযোগে এসে পৌঁছায় এবং সেগুলো নামিয়ে গুদামে রাখার পর প্রশাসন অভিযান চালায়।

অসীম কুমার সাহার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে জানান, জব্দ করা ১ হাজার ২২৬ বস্তা চালের মধ্যে তিনি ৬৬৬ বস্তা ও গৌতম কুমার ৬০০ বস্তার মালিক। মেহেরপুরের গাংনী এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চালের ডিও (আধা সরকারি বরাদ্দপত্র) কেনা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চালগুলো বস্তাবদল করে চুয়াডাঙ্গা শহর ও আশপাশের বাজারে বিক্রির জন্য গুদামে মজুত করা হয়েছিল। প্রতি কেজি চাল ৩৫ টাকা দরে কেনা হয়েছে, যা ৩৭ টাকা দরে বিক্রির জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছিল।’

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বিশ্বাস মুঠোফোনে জানান, চুয়াডাঙ্গায় প্রশাসনের অভিযানে জব্দ চালগুলো কাবিখা প্রকল্পের, যা তাঁর (গাংনী খাদ্যগুদাম) গুদাম থেকে রোববার বিকেলে দুটি ট্রাকে ভর্তি করা হয়েছিল। মেহেরপুর-২ আসনের সাংসদ এলাকার উন্নয়নে বামুন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ও ছয় ইউপি সদস্যকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) হিসেবে চালগুলোর ডিও দিয়েছিলেন। ওই বরাদ্দপত্র যাঁরা এনেছিলেন, তাঁদের চাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে জানান, সরকারি চাল মজুতের ওই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ইউএনও মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলাম।