কলেজপড়ুয়া ছাত্রের জীবনগাথা

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

শেষ কবে কলেজ গিয়েছি আমার মনে আছে, ১৬ মার্চ। কলেজ ছুটির পর জানতে পারলাম করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। প্রথমে শুনে ভালোই লাগছিল। ভেবেছিলাম ব্যস্ত জীবনে কিছুদিন ছুটি পাওয়া যাবে। কিন্তু আজ এই গহনকালে মনে হচ্ছে, সেই যাপিত জীবনই যে ছিল স্বর্গ।
কলেজের দিনগুলো আর বন্ধুদের খুবই মনে পড়ছে। এই সময় কলেজে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে কলেজে যাওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিনের মতো সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠা, গোলাপবাগ মোড়ে বলাকা বাসের জন্য অপেক্ষা করা, ক্লাসের দ্বিতীয় টেবিলটায় বসা। এখন সবকিছুই স্মৃতি।
সমাজবিজ্ঞান ম্যামের ডায়ালগও আর শোনা হয় না (তোমরা তো কেউ পাস করতে পারবা না)। আমাদের ভূগোল স্যারের ডায়ালগও মাঝেমধ্যে মনে পড়ে (এখনো গুনগুন করছ)। প্রান্তর স্যারের সঙ্গে জোকারগিরি করা (উফ লাগছে)। আইসিটি ক্লাসে মাঝেমধ্যে হারিয়ে যাওয়া। আমাদের প্রিয় জহিরুল স্যার (ইংরেজি) হঠাৎ করে তাঁর ডায়ালগ ‘গট দ্য পয়েন্ট’ বলা বন্ধ করে দিলেন, যা আমরা খুবই মিস করতাম। ফারুক স্যার (বাংলা), মুনিয়া ম্যাম (ইতিহাস), নাহিদ ম্যাম (অর্থনীতি) তাঁদের কথাও মনে পড়ছে। তাঁরা যে এক একজন ভালোবাসার নাম।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কিছুদিনের মধেই সবার সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ক্লাস না হলে গানের আড্ডাগুলোই বিশেষ করে ভালো লাগত। আবার ফরচুন মার্কেটে যেয়ে পুল খেলা, বাণিজ্যমেলায় যাওয়া, ধানমন্ডি লেকে যাওয়া, রমনা পার্কে আড্ডা দেওয়া আরও কত কী! এখন সবকিছুই স্মৃতি। নতুন পৃথিবীর অসম্ভব সুন্দর কিছু দেখার প্রত্যাশায় দিন গুনি।
করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরবাসী বের হচ্ছেন না। এ সময় হাতিরঝিল, শান্তিনগর, রমনা পার্ক, মতিঝিল থেকে শুরু করে ধানমন্ডি, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, আজিমপুর ফিরে পেল এক হারানো সৌন্দর্য!
মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখি, যেদিন দেশে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হবে না, কত না আনন্দ সেদিন এ দেশের মানুষের! এমন আনন্দ, কেউ কখনোই হয়নি। আমার স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে।
* একাদশ শ্রেণি, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা। [email protected]