অধিক সংক্রমিত এলাকায় বিশেষ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসে অধিক সংক্রমিত এলাকাকে বিশেষ কোনো নিয়ন্ত্রণে (রেড জোন বা এ ধরনের ব্যবস্থা) নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে লাল, হলুদ ও সুবজ এলাকায় ভাগ (জোনিং) করার বিষয়টিকেও সাধুবাদ (অ্যাপ্রিশিয়েট) জানিয়েছেন।

এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা জানান। বিটিভির উপস্থিতিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ের তথ্য পরে অন্য গণমাধ্যম সংগ্রহ করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো এলাকায় যদি অধিক সংক্রমণ থাকে, সে ক্ষেত্রে যদি ওই এলাকাকে বিশেষ কোনো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন।

জোনিং (সংক্রমণ বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ) করার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইটি ব্যবহার করে জোনিং করার চিন্তাভাবনার বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। তবে এটি মন্ত্রিসভার বিষয় নয়। আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটি করার কর্তৃপক্ষ। সতকর্তার জন্য ‘রেড জোন’ করাটি ভালো বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার রাত ১২টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে লাল এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে লকডাউন শুরু হবে। সোমবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান।

এর মধ্যে দিয়ে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে ঢাকায় শুরু হচ্ছে এলাকাভিত্তিক ভিন্নমাত্রার লকডাউন (অবরুদ্ধ)। প্রাথমিক তালিকায় ওয়ারীর একটি জায়গাও রয়েছে। তবে এখানে কবে থেকে শুরু হবে, সেটি সোমবার বিকেলে পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, তাঁরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাতেও তা হবে। সংক্রমণ বিবেচনায় করে চিহ্নিত করা ঢাকার লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা কীভাবে পরিচালিত হবে, তার গাইডলাইনও ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে। লকডাউন–ঘোষিত এলাকায় চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল রাতে মালবাহী যান চলতে পারবে। ওই এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য থাকবে হোম ডেলিভারি ও নির্ধারিত ভ্যানে করে কাঁচাবাজার কেনাবেচার সুযোগ। এখানকার অফিস-আদালত বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সাধারণত বন্ধ থাকবে। খুব প্রয়োজনে চললেও তা হবে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে। করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য থাকবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ বুথ। থাকবে চিকিৎসা পরামর্শের সুযোগ।

কেন্দ্রীয় একটি কমিটির অধীনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে লকডাউনসহ অন্যান্য বিষয় বাস্তবায়িত হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন বন্ধের পর গত ৩১ মে থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হয়েছে। এরপর থেকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অবনতি হয়। এমন অবস্থায় ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে ‘রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে’ ভাগ করে ভিন্ন মাত্রায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কী প্রক্রিয়ায় সেটি হবে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের তিনটি এলাকায় ইতিমধ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।