বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে ঢিলেঢালা সড়ক মন্ত্রণালয়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আহ্বান, কঠোর শাস্তির নির্দেশ কিংবা মহামারির দোহাই—কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পথে বাস–মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছেন পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, পরিবহনমালিকদের দাবির মুখে শুরুতেই ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার পর তা মানতে বাধ্য করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সড়ক মন্ত্রণালয়। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠার পর অতীতে অন্তত পরিবহন মালিক–শ্রমিকনেতাদের ডেকে শাসানো হয়। লোক দেখানো হলেও মালিক–শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কমিটি করে মাঠে থাকার চেষ্টা করেন। এবার তা–ও দেখা যায়নি।

অতীতেও সরকার নির্ধারিত ভাড়া হারের চেয়ে বাড়তি আদায় করেছেন পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা। এ জন্য নতুন ভাড়ার হার যেদিন থেকে কার্যকর হয়, সেদিন থেকেই জোরালোভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পরিস্থিতি সহনীয় রাখার চেষ্টা করে থাকে। মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা, মামলা–কারাদণ্ড দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা থাকে। এবার এর কোনোটাই সেভাবে হয়নি।

আজ মঙ্গলবারও সংসদ ভবন এলাকার নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, যাঁরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন, তাঁরা এই মহামারিতে গণদুশমন বলে চিহ্নিত হবেন। তাঁরা সরকারের সঙ্গে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রীর কঠোর ব্যবস্থা কী, এ বিষয়ে স্পষ্ট নন খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সড়ক পরিবহন আইনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের দায়ে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড কিংবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ১ জুনের পর কাউকে এমন শাস্তি দেওয়া হয়নি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের দায়ে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের চলাচলের অনুমতি (রুট পারমিট) বাতিলেরও বিধান আছে। কিন্তু এই শাস্তি অতীতেও কোনো দিন প্রয়োগ করা হয়নি।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বাসের ভাড়া মালিকেরা মুখ দিয়ে বের করার আগেই বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। নামকাওয়াস্তে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) একটা বৈঠক করলেও সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। পরিবহন মালিক–শ্রমিক সংগঠনের শক্তি এই থেকেই বোঝা যায়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) ও চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ইউসুফ আলী মোল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে কঠোর হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা বিআরটিএর কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। বাড়তি ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনে রুট পারমিট বাতিল করার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা দুই মাসের লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই বিষয়টা যাতে সংবেদনশীল দৃষ্টিতে দেখা হয়। এ জন্যেই শুরুতেই বাস–মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছেন পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা।

১ জুন থেকে সারা দেশে বাস–মিনিবাস চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারি নির্দেশ হচ্ছে বাস–মিনিবাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। করোনা–আতঙ্কে যাত্রী কম। মানুষের মধ্যেও গাদাগাদি করে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনিহা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ পরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকছে। কিন্তু সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করলেও ঢাকায় পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা শতভাগ, কোথাও কোথায় ১২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন। ঢাকায় বাসে উঠলেই রুটভেদে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে।


বিআরটিএ গতকাল ঢাকায় ৫টি এবং চট্টগ্রামে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এসব আদালতে ৩৪টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে সাড়ে ২৮ হাজার টাকা।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরুতেই ভাড়া বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, সরকার এই নতুন ভাড়াও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এখন বাড়তি ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে। আর এতে নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ।’