ধর্ষণ মামলার বাদী গৃহবধূকেই সালিসে লাখ টাকা জরিমানা

নাটোরে ধর্ষণের মামলার বাদী এক গৃহবধূকে সালিসে লাখ জরিমানা করা হয়েছে। এমনকি সালিসে আসতে দেরি করায় তাঁর বাবাকেও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাতে এই সালিস বসে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে ওই সালিস বৈঠক হয়। ওই গৃহবধূ গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রী। সালিসে গৃহবধূকে জরিমানা করার ঘটনায় দুই মাতব্বরকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধানসহ অন্যদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা।

ওমর আলী প্রধান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও তেবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী বিদেশে থাকেন। বিদেশ থেকে তিনি তাঁকে (চেয়ারম্যানকে) ফোন করেছিলেন। স্থানীয় একটি মসজিদের উন্নয়ন বাবদ এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এ কথা সালিস বৈঠকে জানানো হয়েছে মাত্র। এটাকে জরিমানা বলা ঠিক হবে না।

নাটোর সদর থানা-পুলিশের ভাষ্য, গত ২৯ মে রাতে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন অমর কুমার (২২) নামের এক তরুণ। ঘটনার সময় তাঁকে স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেন। ৩০ মে থানায় অমর কুমারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন গৃহবধূ। পুলিশ ওই মামলায় তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

এদিকে ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে গ্রামে সালিস বৈঠকের আয়োজন করে স্থানীয় মাতবররা। এতে নেতৃত্ব দেন তেবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান একই গ্রামের। সালিসে গৃহবধূর বিরুদ্ধে অমরের সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আনা হয়। তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন মাতবররা। একই সঙ্গে সালিসের স্থানে বিলম্বে আসায় গৃহবধূর বাবাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সদর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিন ও সোবহান আলী নামের দুই মাতব্বরকে আটক করে। তবে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান ও আব্দুল হাকিম নামের অপর মাতবরকে আটক করেনি।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সালিসে চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন মাতবর উপস্থিত ছিলেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। অভিযান চালিয়ে তাঁরা দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদের এলাকায় পাওয়া যায়নি।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ধর্ষণের মতো অভিযোগ নিয়ে সালিস করার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যানও জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িত থাকলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।