শান্তি বৈঠকের বদলে সংঘর্ষ, নিহত ৩

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তিন মাস আগে গ্রামে হওয়া শান্তি বৈঠকে দুপক্ষই অঙ্গীকার করেছিল আর বিবাদে জড়াবে না। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আবারও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় ঠিক করা হয়েছিল পুলিশের উপস্থিতিতে আবারও শান্তি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকের বদলে তারা জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। এতে নিহত হয়েছেন গ্রামের তিন বাসিন্দা। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন।

বুধবার দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গণ্ডব গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত শটগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও উভয় পক্ষের লোকজন সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিরা হলেন মোক্তার মোল্লা (৫৮) ও তাঁর ভাতিজা হাবিল মোল্লা (৫২) এবং রফিক মোল্লা (৪০)। তিনজনই কৃষিজীবী। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদের নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গণ্ডব গ্রামে দুপক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে। এর একপক্ষে নেতৃত্ব দেন গ্রামের জেলা পরিষদ সদস্য বিপ্লব শেখ। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মিরাজ মোল্লা। নিহত ৩ ও আহত ১৩ জন মিরাজ মোল্লা পক্ষের।

আহত ব্যক্তিরা হলেন লাকি বেগম (৪০), আজাদ বিশ্বাস (৫০), নজরুল ইসলাম (৪৫), মিজান মোল্লা (৩৫), জুয়েল মোল্লা (৩০), এনতাজ মোল্লা (২৫), সাইফুল মোল্লা (৩০), খবির শেখ (৩৫), নজরুল মোল্লা (৩৫), ইকরাম মোল্লা (৫০), সোহাগ মোল্লা (২৫), কিবরিয়া মোল্লা (৩৫), তানবীর আলী (২২), সুরুজ মোল্লা (৩২) ও ওসমান গনি (৩৫)।

পুলিশ জানায়, বিরোধপূর্ণ এই গ্রামে তিন মাস আগে পুলিশের উদ্যোগে শান্তি বৈঠক হয়। সেখানে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিমউদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উভয় পক্ষ অঙ্গীকার করে আর গোলমাল হবে না। কয়েক দিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়। এ নিয়ে বুধবার শান্তি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উভয় পক্ষ নিজেরাই মীমাংসা করবে বলে পুলিশকে জানায়। এরপর দুপুরে সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন নিহত হন।

গ্রামের লোকজন জানান, বিপ্লব শেখের লোকজন সকালে অতর্কিতে গ্রামের পুলিশ সদস্য ওসমান গনিকে মারধর করেন। এরপর পুলিশ এসে সকালে বিপ্লব শেখের বাড়ি থেকে ঢাল ও সরকি উদ্ধার করে। এর মধ্যেই বেলা দুইটার দিকে মিরাজ মোল্লা পক্ষের লোক দেলোয়ার শেখের বাড়িতে বিপ্লব শেখের লোকজন হামলা চালান। এ খবর পেয়ে মিরাজ মোল্লার লোকজন সেখানে গেলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত মোক্তার মোল্লা ও হাবিল মোল্লাকে বিকেল চারটার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল পাঁচটার দিকে মারা যান রফিক মোল্লা।

মিরাজ মোল্লা বলেন, ‘দেলোয়ার শেখের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে ২০-২৫ জন যাচ্ছিলাম। পথে প্রতিপক্ষের অন্তত দেড় শ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান।’ বিপ্লব শেখ ও তাঁর পক্ষের লোকজনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এলাকায় না পাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, দুপক্ষের সংঘর্ষ থামাতে শটগানের ১৯টি গুলি ছোড়া হয়েছে। পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার জসিমউদ্দিন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গেছেন।