ভালুকায় সংক্রমিতের ৫৩ শতাংশই কারখানাশ্রমিক

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক আছেন ৮২ জন, যা মোট সংক্রমিতের ৫৩ শতাংশ। প্রতিদিনই বাড়ছে উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা।

এদিকে গতকাল বুধবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষায় ভালুকায় নতুন করে আরও ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনই কারখানাশ্রমিক।

করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৪ জুন থেকে উপজেলার কারখানাগুলোতে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হতে থাকে। ওই দিন তিনজন নারীর করোনা শনাক্ত হয়। তিনজনই কারখানাশ্রমিক। পরদিন শুক্রবার উপজেলায় ১৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাঁরা সবাই স্কয়ার ফ্যাশন নামের কারখানায় কাজ করেন। এরপর গত শনিবার উপজেলায় ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যাঁদের ৮ জনই ছিলেন পোশাককর্মী। তাঁরাও এসকিউ, স্কয়ার ফ্যাশনসহ অন্যান্য কারখানার শ্রমিক। গত রোববার শনাক্ত ২১ জনের মধ্যে ২০ জনই তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এক দিন পর মঙ্গলবার উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। সেখানেও ২৭ জন ছিলেন কারখানাশ্রমিক।

উপজেলায় প্রথম কোভিড-১৯–এ সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয় গত ১৯ এপ্রিল। প্রথম করোনা শনাক্তের পর সংখ্যাটি ৫০ ছুঁতে সময় নেয় ৪৮ দিন। এর মধ্যে শ্রমিক ছিলেন মাত্র তিনজন। পরের মাত্র তিন দিনেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫১ জনের। এর মধ্যে ৩৬ জন পোশাককর্মী। আর পরের ২ দিনে শনাক্ত হয় ৫৩ জন। তাঁদের মধ্যে কারখানাশ্রমিকের সংখ্যা ৪৩ জন।

শ্রমিকদের আক্রান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার ফ্যাশনের কর্মকর্তা (অ্যাডমিন) মো. রফিক বলেন, ঈদের সময়ে শ্রমিকেরা বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে আবার যাঁর যাঁর কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এই যাওয়া-আসার মধ্যে হয়তো কিছু শ্রমিক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এখন প্রতিদিনই পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের আলাদা করা হচ্ছে। তাই সংখ্যাটা বাড়ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই সংখ্যাটা কমতে শুরু করবে। তিনি দাবি করেন, কারখানার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করানো হচ্ছে। স্কয়ার ফ্যাশনে সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিক দুই শিফটে কাজ করতেন। এখন সেখানে ৬টি শিফটে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আবাসিক দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। সেখানে কিন্তু একজন শ্রমিকও আক্রান্ত হননি। যে ৪০ জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতিদিন দুইবার করে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাসুদ কামাল বলেন, গত ২ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ৫৩ জন। উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ জন ও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করানোর চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আসা-যাওয়ার পথে স্বাস্থ্যবিধি মানেন না শ্রমিকেরা। ফলে উপজেলার শিল্পকারখানাগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা।