কোভিড রোগীদের বাড়িতে ফল নিয়ে হাজির করোনাজয়ী ইউএনও

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কোভিড–১৯ রোগীদের বাড়িতে ফলের প্যাকেট নিয়ে হাজির করোনাজয়ী ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলাম (লাল পাঞ্জাবি পরা)। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৬২ জনকে উপহার হিসেবে ফল দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কোভিড–১৯ রোগীদের বাড়িতে ফলের প্যাকেট নিয়ে হাজির করোনাজয়ী ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলাম (লাল পাঞ্জাবি পরা)। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৬২ জনকে উপহার হিসেবে ফল দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

চকচকে রঙিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো বেশ বড় একটা প্যাকেট। এটা ভর্তি আম, লিচু, কলা, আপেল, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল। এমন প্যাকেটের সংখ্যা অন্তত ৬২টি। ওই প্যাকেটগুলো নিয়ে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি হাজির হয়ে উপহার হিসেবে দিয়েছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান রুহুল ইসলাম।

গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নিজ কার্যালয়ের লোকজন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে তিনি তা পৌঁছে দেন। ‘আমরা করব জয়’ শিরোনাম দিয়ে ওই প্যাকেটগুলোর গায়ে করোনাজয়ী ওই ইউএনও লেখেন, ‘আপনাকে এই করোনাযুদ্ধে জিততেই হবে। পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য আপনাকে জিততেই হবে। আপনি দ্রুত সুস্থ হবে উঠবেন। মনোবল ধরে রাখুন। মনের শক্তিতে জয় আসবেই। আমরা আপনার পাশে আছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল কেন্দুয়ার দলপা ইউনিয়নের এক যুবক (২৮) প্রথম কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হন। এর ২৬ দিন পর গত ১১ মে ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলামও আক্রান্ত হন। অবশ্য আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁকে নিয়ে গত ২৬ মে প্রথম আলোয় ‘করোনাকে জয় করলেন কেন্দুয়ার ইউএনও’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দুয়ায় মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৯৩। এর মধ্যে ২৮ জন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

করোনা রোগীদের জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ ফলমূল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। ইউএনও আল-ইমরুল রুহুল ইসলাম প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে আম, লিচু, আপেল, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল পৌঁছে দিচ্ছেন। বুধবার রাতে ইউএনও তাঁর কার্যালয়ের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পৌর শহরের একটি এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে যান। সেখানে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রোগীর খোঁজখবর নিয়ে তাঁর পরিবারের এক সদস্যের হাতে ফলের প্যাকেট তুলে দেন। একইভাবে ওই রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রোগীদের খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের বাড়িতে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন করোনাজয়ী এই ইউএনও।

এ ব্যাপারে ইউএনও প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকে তাঁদের সাহস ও সহযোগিতা করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। আক্রান্ত রোগীদের ঘরে বন্দী থাকতে হচ্ছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না। তাই তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কিছু সামান্য উপহার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম ইউএনওর কাজের প্রশংসা করে বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরমুখী করতে, মাস্ক, সাবান-হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন বন্ধ রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অসহায়দের ঘরে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিতে দিন-রাত বিরামহীন ছুটে বেড়িয়েছেন আল-ইমরান রুহুল ইসলাম। ইতিমধ্যে তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। দুদিন ধরে উপজেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফল পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনোবল শক্ত হবে।