ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ রোগীরা

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই খোয়া যাচ্ছে রোগী ও স্বজনদের ওষুধপথ্য, টাকা, মুঠোফোন, কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে টাকা চুরির সময় ধরা পড়েন মো. আলম (২৭) নামের এক যুবক। পরে তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল-মামুন।

কয়েকজন রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে নানা বিড়ম্বনা তো আছেই, সেই সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে ওষুধপথ্যসহ অন্য মালামাল। কারণ, প্রায় প্রতিদিনই এসব চুরি হচ্ছে।

পেটব্যথা নিয়ে গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন সদর উপজেলার কাচনা গ্রামের শিরিন আক্তার (৪২)। তাঁর দেখভালের কাজটি করছিলেন তাঁর স্বামী আবদুর রশিদ। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্ডে স্ত্রীকে ঘুমিয়ে রেখে হাসপাতালের বাইরে গরম পানি আনতে যান। ফিরে এসে দেখেন, শয্যার পাশের ব্যাগটি নেই। ব্যাগে কয়েকটি ইনজেকশন, ওষুধ, কাপড়চোপড় ও একটি মুঠোফোন ছিল।

রানীশংকৈল উপজেলা রাতোর এলাকার কিসমত আলী জানান, হাসপাতালে রাতের বেলায় কোনো পাহারাদার থাকে না। এ সুযোগে ছিঁচকে চোরেরা রোগী ও স্বজনদের জিনিসপত্র চুরি করে নেয়। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা যায়, তাহলে নিরাপত্তা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীহাট এলাকার বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, ‘গত রোববার রাতে গাইনি ওয়ার্ডের ভেতর থেকে আমার মোবাইল ফোন ও জিনিসপত্রভর্তি ব্যাগ চুরি হয়ে যায়।’

গতকাল মেডিসিন বিভাগের এক রোগীর স্বজন আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রাতত আউটডোরে শুয়েছিনু। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখু, পকেট থাকি মানিব্যাগখান নাই।’ হাসপাতালে অবশ্য অভিযোগ জানাননি তিনি। তাঁর ভাষ্যমতে, অভিযোগ করে আর কী হবে। ওই টাকা তো আর ফেরত পাবেন না।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর গ্রামের শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক শিশু রোগীর অভিভাবক আনিছুর রহমান আক্ষেপ করে বলছিলেন, প্রতিদিনই রোগীর জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। গতকাল তাঁর মুঠোফোনটি খোয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে প্রায় প্রতিদিনই রোগী ও তাঁদের লোকজনের জিনিসপত্র চুরির খবর পাই। এসব চুরির ঘটনায় একটি চক্র জড়িত। হাসপাতালের বাইরের লোকজনের অবাধ যাতায়াতের কারণেই এমনটি হচ্ছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও জনবলসংকটের কারণে আমরা ভালোভাবে হাসপাতাল নজরদারিতে আনতে পারছি না। জনবল পেলেই এসব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, হাসপাতালে এসব সমস্যা তাঁর নজরে আছে। হাসপাতাল চত্বরে প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরাও বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।