কুয়েতে আটক সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন

সাংসদ কাজী শহিদ পাপুল। ফাইল ছবি
সাংসদ কাজী শহিদ পাপুল। ফাইল ছবি

মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে রোববার পর্যন্ত রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর। গত শনিবার কুয়েতের মাশরিফ এলাকায় বাংলাদেশের সাংসদকে নিজের বাসা থেকে আটক করে দেশটির সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)।

আজ শুক্রবার কুয়েতের গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের অভিযোগের ব্যাপারে ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ওই ১১ জনের সবাই সাংসদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতি বছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে রোববার পর্যন্ত রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, 'কুয়েতের কাছ থেকে সরকারীভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। কুয়েতে আমাদের রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছিলেন কুয়েতের সরকারের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। যেহেতু কুয়েতে এখন বন্ধ চলছে তাই তিনি এ বিষয়ে চিঠির কোন জবাব পাননি। তবে বিশ্বের যে কোন দেশে বাংলাদেশিরা আটক হলে কনসুলার একসেসের বিষয়টি বাংলাদেশের মিশনগুলো দিয়ে থাকে। সাংসদের ব্যাপারেও আমরা এই ধারা অনুসরণ করব। অর্থাৎ কেউ আটক হলে তিনি দূতাবাসের সহায়তা চাইবেন। এরপর মিশনের প্রতিনিধি গিয়ে তার জন্য কি ধরণের আইনি সুবিধা দেওয়া হবে সেটি নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'

কুয়েত থেকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিকেলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, আটক সাংসদ কাজী শহিদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের তদন্ত অনেকটাই শেষ করেছে সেখানকার গোয়েন্দারা। তারা এখন তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সিআইডির সদস্যরা সাংসদ কাজী শহিদের প্রতিষ্ঠান মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের দপ্তরে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে সিআইডির কর্মকর্তারা।

আটক সাংসদ কোথায় আছেন এবং তাঁর সবশেষ পরিস্থিতি কি জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কুয়েত সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংসদ কাজী শহিদকে তাদের হেফাজতে রেখেছে। গত শনিবারের পর থেকে একাধিকবার তাঁর জামিনের চেষ্টা হয়েছিল। তবে তাকে জামিন দেওয়া হয়নি।

সাংসদ সিআইডির হেফাজতে আছেন আর তাঁর জামিন নাকচ হয়ে গেছে এ তথ্যগুলো কুয়েতের কর্তৃপক্ষ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে কীনা সেটি তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে স্পষ্ট করেননি।

কুয়েতের মাটিতে গিয়ে বাংলাদেশের একজন সাংসদ মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের মত গুরুতর অভিযোগে আটক হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। সাংসদের ব্যাপারে সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে তাকে বিশেষ কোন নির্দেশনা দিয়েছে কী না জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, 'সাংসদের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হালনাগাদ তথ্য তাকে নিয়মিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।'

আরব টাইমস ও আল কাবাসসহ কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত শনিবার রাতে সাংসদ কাজী শহিদকে আটকের পর তার জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর ওইদিন তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে বিচারিক হেফাজতে পাঠিয়ে নিয়ে রিমান্ডে নিতে সিআইডির আবেদন মঞ্জুর করে। এরপর আবার তাঁর জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুপুরে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা অনানুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূতের কাছে সাংসদের আটক ও রিমান্ডে থাকার বিষয়টি জেনেছেন। কুয়েত সরকার এখনো দূতাবাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি এটা রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম ঢাকায় টেলিফোনে উল্লেখ করেছেন।

প্রসঙ্গত গত ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের গণমাধ্যম আরব টাইমস ও আল কাবাশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আটক সাংসদের বিরুদ্ধে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের বিষয়টি প্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। যদিও কুয়েতের গণমাধ্যমে সাংসদ কাজী শহিদের নাম প্রচার করেনি। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসীর মাধ্যমে সাংসদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ পায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগের তথ্য প্রমাণের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকেই কুয়েতের ভিসা বাণিজ্যের নামে মানব পাচারের বিষয়টি বেশ জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। এর ফলে গত মার্চ থেকে দেশটির পার্লামেন্টে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে। খোদ পার্লামেন্টের স্পিকার দেশি-বিদেশি নির্বিশেষে সকল মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এরই মধ্যে ভিসা বাণিজ্য মানব পাচারের অভিযোগে মিশরের এক নাগরিককে কুয়েতের আদালত তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। কুয়েতের সাংসদেরা ভিসা বাণিজ্যের নামে মানব পাচার বন্ধে বিল আনার দাবি জোরের সঙ্গে বলছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশের সাংসদের আটক হওয়াটা সুখকর নয়।