বদরগঞ্জে বোরোর ফলনে রেকর্ড, দামে খুশি কৃষক

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় এক মেট্রিক টন করে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। করোনাকালে বাজারে সেই ধানের ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরোর চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে উপজেলায় বোরোর চাষ হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৫০ হেক্টরে। ধানের দরপতনে এবার ৩০০ হেক্টরে বোরোর চাষ কম হয়েছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, গত ১০ বছরে উপজেলায় বোরোর গড়ে ফলন হয়েছিল হেক্টরপ্রতি সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টন। এবার হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে গড়ে সাড়ে ছয় মেট্রিক টন। অন্যদিকে ১০ বছর পর বাজারে ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। অব্যাহত হতাশা কাটিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে তাঁরাও খুশি।

কৃষি কর্মকর্তা জোবাইদুর রহমান বলেন, আজ শনিবার স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে ধান বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ (২৮ কেজি) ৬৫০ টাকা। এবার প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ১৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৩ টাকার ওপরে। এতে প্রতি মণ (২৮ কেজি) ধান চাষে খরচ বাদে কৃষক লাভ করছেন প্রায় ১৮০ টাকা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টা, অনুকূল আবহাওয়া এবং সারের সরবরাহ ও দাম কমানোর কারণে চলতি মৌসুমে বোরোর ভালো ফলনে ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এবার সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ডিএপি সার ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮০০ টাকা করেছিল। এতে কৃষকেরা সার কিনে বোরোর জমিতে পরিমাণমতো প্রয়োগ করতে পেরেছেন।

আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক বরকত আলী সরকার বলেন, ‘৮-১০ বছর থাকি ধান আবাদ করি লস খাওছি। এইবার বাজারোত ধান বেচেয়া ভালোয় লাব (লাভ) হওচে। শেখের বেটি (শেখ হাসিনা) হামার প্যাকে মুখ তুলি তাকেয়া ধানের দাম বাড়ে দেচে।’

রাধানগরের কৃষক হায়দার আলী জানান, ৬০ শতক জমিতে ধান আবাদ করে প্রতিবছর ৪৪-৪৫ মণের (২৮ কেজিতে মণ) বেশি কখনো পাননি। এবার পেয়েছেন ৬০ মণ। বাজারে ধানের দাম এবারের মতো কখনো পাননি। এমন দাম পেলে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবেন। লোহানীপাড়া গ্রামের কৃষক আকতারুল আলম বলেন, ‘বাজারোত সউগ জিনিসের দাম বাড়ি গেইচে। তাতে কেষকের বারোটা বাজি গেইছে। এইবার ধানের দাম বাড়েয়া হামরা লাভ পাওচি। তাতে করি হামার কষ্ট কমছে।’

বদরগঞ্জের ধানের বাজার ঘুরে জানা গেছে, আজ শনিবার বিআর ১৫, ১৬, ২৯ ও ২৮ জাতের প্রতি মণ (২৮ কেজি) বোরো ধান বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৬৬০ টাকায়।

বদরগঞ্জ বাজারের ধান ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, চার বছর পর এবার ধান বিক্রি করে কৃষক লাভের মুখ দেখছেন। চারদিকে যখন করোনা নিয়ে হতাশা, তখন ধানের দাম পেয়ে কৃষক যারপরনাই খুশি। গত আমন মৌসুমের শুরুতে কৃষক প্রতি মণ (২৮ কেজি) ধান বিক্রি করেছিলেন ৩০০ টাকায়। এতে তখন উৎপাদন খরচই ওঠাতে পারেননি তাঁরা।

উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি–এলএসডি) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত ২০ মে উপজেলা খাদ্যগুদামে বোরো ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রতি কেজি ২৬ টাকা হিসাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে ৩ হাজার ৬৬ মেট্রিক টন। ক্রয় অভিযান চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।