আলো আসবেই, করোনা যাবেই

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

বাংলাদেশে করোনাকালে ঘরবন্দী জীবনের শুরুর দিকের কথা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন নিজ ঘরে শুয়ে-বসে কাটাচ্ছি। খাচ্ছি-দাচ্ছি, করোনা নিয়ে সারা দুনিয়ার নেতিবাচক সব খবর পড়ছি আর দুশ্চিন্তা করছি। কিন্তু এভাবে কদিন কাটতেই মনে হলো, দুশ্চিন্তা করে কী লাভ! লাভের চেয়ে ক্ষতিই তো বরং বেশি৷

করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকর ওষুধ বা টিকা যেহেতু পাওয়া যায়নি, সুতরাং এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বা অন্তত ঠিক রাখা। অনেক জায়গাতেই শুনেছি, দুশ্চিন্তা করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই করোনাকালে যথাসম্ভব মনটাকে রাখতে হবে ফুরফুরে, দুশ্চিন্তাকে জানাতে হবে বিদায়।

যেই ভাবা সেই কাজ। দেশ-বিদেশের হরেক রকম মুভি দেখতে শুরু করলাম। মুভি দেখার অভ্যাসটা পুরোনো হলেও ইদানীং নিয়মিত ছিল না। যা বলছিলাম। স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত ভালো ভালো মুভি দেখছি। সেদিন দেখতে বসলাম হলিউডের বিখ্যাত ‘ইনডিপেনডেন্স ডে’ মুভিটি। যেখানে দেখা যায় পৃথিবীতে নেমে এসেছে ভিনগ্রহের প্রাণী তথা এলিয়েনদের মহাকাশযান—ফ্লাইং সসার। কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই পৃথিবীর সব বড় বড় শহর আগুনে পুড়ে দিচ্ছে সসারগুলো। মানুষ এদিক–ওদিক ছুটছে। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছে, সেখানেই পুড়ে ছাই হতে হচ্ছে। বিমান থেকে বারবার মিসাইল ছুড়ে বা অন্য কোনো উপায়েও যখন সেই ভয়ানক সসারগুলোর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করা গেল না, তখন একপর্যায়ে পারমাণবিক আক্রমণ করতে বাধ্য হলো পৃথিবীবাসী। সবার ভাবনা, এবার তো ধ্বংস হতেই হবে সসারকে, কিন্তু পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় তো নিজেদেরই অনেক প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা–ও উপায়ান্তর না দেখে সেটাই করা হলো। কিন্তু তাতেও ফল হলো না। পারমাণবিক আক্রমণে সসারের চুল পরিমাণ ক্ষতিও হলো না!

এখন কী করবে সারা পৃথিবীর মানুষ? একের পর এক শহর ধ্বংস করেই চলেছে ওই সসারগুলো। কেউ জানে না কী আছে ওই সসারের ভেতর। জানে না কেমন তারা দেখতে। শুধু জানে, সমগ্র মানবজাতির শত্রুই অজানা–এক-অভিন্ন, আর তা হলো ‘সসার’। মুভিটিতে দেখা ভীত উদ্বিগ্ন অভিনেতাদের মনে হচ্ছিল আমাদের আজকের করোনাকালের সব মানুষ। আমাদের সবার শত্রুই তো আজ অজানা-এক-অভিন্ন, আর তা হলো একটি ভাইরাস।

যাহোক। মুভিতে ফিরে আসি৷ কী হয়েছিল শেষে? কী আর হবে! ওই যে বেশির ভাগ মুভিতে যা দেখানো হয় ‘হ্যাপি এন্ডিং’। কঠিন বিপদের সময় মনোবল না হারানো, একতাবদ্ধ মানুষদের কাছেই পরাজিত হয় সেই ভয়াবহ সসারগুলো। ধরণিতে শান্তি ফিরে আসে। মানুষ আবারও হাসে।

অনেকেই বলবেন, ‘হ্যাপি এন্ডিং’ শুধু গল্প-উপন্যাস-মুভিতেই দেখা যায়। কিন্তু না, বাস্তব জীবনে এমন উদাহরণের সংখ্যাই কিন্তু বেশি, অগণিত। ভেবে দেখুন স্প্যানিশ ফ্লু বা ১৯১৮–এর ফ্লু মহামারির সময় পৃথিবীতে আজকের মতো এত মানুষ ছিল না। কিন্তু সেই মহামারিতে তখনকার সময়েই ৫–১০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল! আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি মানুষ, যা পৃথিবীর তখনকার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল।

শুনতেও কী ভয়ংকর, তাই না? তবে আশার কথা, সেই মহামারিও কিন্তু একপর্যায়ে নীরব হয়েছিল। সুতরাং করোনাভাইরাসের প্রকোপও আজ নয় কাল ফিকে হয়ে আসবেই। এটা উপন্যাস, মুভির কথা নয়। ইতিহাস তাই বলে। সে জন্য আপাতত ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করতে হবে। হারানো যাবে না মনোবল। গড়ে তুলতে হবে ঐক্য। ধরে রাখতে হবে মানবতা, একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ। আলো? সে আসবেই।

গ্রিন রোড, ঢাকা