চিকিৎসক 'হত্যা'র প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মামলা দায়ের

রোগীর স্বজনদের হামলায় চিকিৎসক রকিব খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকেরা। সাত রাস্তার মোড়, খুলনা, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো
রোগীর স্বজনদের হামলায় চিকিৎসক রকিব খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকেরা। সাত রাস্তার মোড়, খুলনা, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো

খুলনা নগরে রোগীর স্বজনদের মারধরে চিকিৎসক আবদুর রকিব খানের (৫৯) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এদিকে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও খুলনা করোনা হাসপাতাল বাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে জেলার সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএমএ খুলনা শাখা।

আজ বুধবার দুপুরের দিকে রকিব খানের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৮ থেকে ১০ জনকে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ আবদুর রহিম নামের একজনকে ডুমুরিয়ার বেজেরডাঙ্গা এলাকা থেকে আটক করে। পরে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রকিব খান বাগেরহাট সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষ। খুলনায় রাইসা ক্লিনিকের মালিক ছিলেন তিনি। তিনি ক্লিনিকের ওপরের তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।

গত সোমবার রাইসা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাঁর স্বজনেরা রকিব খানকে মারধর করেন। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। ওই রাতেই তাঁকে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে সিটি স্ক্যান করে তাঁর মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ দেখা যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রকিব খানের স্বজনেরা তাঁকে ঢাকায় না নিয়ে দুপুরের দিকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে মারা যান রকিব খান।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বলেন, রাতেই অভিযান চালিয়ে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ক্লিনিকের ভিডিও ফুটেজে যে দুজনকে ব্যক্তিকে মারধর করতে দেখা গেছে, তাঁরা এখনো গ্রেপ্তার হননি। তবে অন্য একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।

চিকিৎসকদের বিক্ষোভ

রোগীর স্বজনদের হামলায় চিকিৎসক রকিব খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকেরা। আজ দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে নগরের সাত রাস্তার মোড়ে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিএমএ, বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনাস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ) এবং বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ খুলনার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী নেওয়াজ, বিপিএইচসিডিওএর খুলনা জেলা শাখার সভাপতি গাজী মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মো. শওকাত আলী লস্কর প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া যেন একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা বা চিকিৎসক-নার্সদের ওপর চড়াও হওয়া একটা হুজুগে পরিণত হয়েছে। বিচারহীনতা ও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে রকিবের মতো গরিবের ডাক্তারকে আজ প্রাণ দিতে হয়েছে।

বক্তারা হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। তা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশের পর এক জরুরি বৈঠক করেন বিএমএ খুলনার নেতারা। বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ওই বৈঠক থেকে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও খুলনা করোনা হাসপাতাল বাদে সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএমএর শোক প্রকাশ

রকিব খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিএমএ। সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি দোষীদের শাস্তির দাবিসহ চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সহযোগিতা চেয়েছেন। দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মন্ত্রী ও সচিব।