ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫ দিন করোনা পরীক্ষার কোনো ফল পৌঁছেনি

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পাঁচ দিন ধরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার কোনো ফলাফল আসেনি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। জেলায় সর্বশেষ ১২ জুন আসা ২৮৯ জনের নমুনার ফলাফলের মধ্যে ৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার ফল আসতে দীর্ঘ সময় লাগায় উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার জন্য ৭ জুন পর্যন্ত নমুনা দেওয়া ব্যক্তিদের ফল এসেছে। সর্বশেষ জেলায় ১২ জুন ২৮৯ জনের নমুনার ফল পৌঁছায়। ওই দিন ৫৩ জন করোনায় সংক্রমিত বলে শনাক্ত হন। এদিকে, ৮ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সংগ্রহ করা ১ হাজার ৮০০ নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে পাঠায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর একটির ফলও আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত জেলায় পৌঁছেনি।

সদরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালসহ সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুই দিনের সংগ্রহ করা প্রায় ৪৫০ জনের নমুনা একসঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়। শুরুতে আইইডিসিআর, পরে আইসিডিডিআরবি ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে নমুনা পাঠানো হতো। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন সিভিল সার্জন। বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া ও কসবা) আসনের সাংসদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান গুরুত্বসহকারে দেখছেন।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ৬৮ শতাংশই চলতি জুন মাসের প্রথম ১১ দিনে (১ তারিখ বাদে, ২-১২ জুন) শনাক্ত হয়েছেন। জেলায় আজ দুপুর পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪০৬ জনের মধ্যে ২ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১১ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ২৭৬ জন। প্রতিদিন গড়ে ২৩ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের ৪ জনই জুন মাসের প্রথম ১২ দিনে মারা গেছেন।

জেলায় করোনা শনাক্তের প্রথম ৪৫ দিনে ১০০ জন, পরের ১১ দিনে ১০৬ জন, পরের ৫ দিনে ৯৯ জন ও পরের ৩ দিনে ১০১ জন করোনায় সংক্রমিত বলে শনাক্ত হন। করোনায় সংক্রমিত ৪০৬ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১১৪ জন, আখাউড়ায় ২৬ জন, বিজয়নগরে ১৪ জন, নাসিরনগরে ২৩ জন, বাঞ্ছারামপুরে ৩২ জন, নবীনগরে ৯৫ জন, সরাইলে ২১ জন, আশুগঞ্জে ১৮ জন ও কসবায় ৬৩ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নবীনগর ও কসবা পৌরসভার ১১টি এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করেছে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স জিন্নাত পারভীন, সিনিয়র স্টাফ নার্স হাসি ইসলাম, কুক মশালচি ইন্দ্র বিকাশ ভৌমিক, ঝাড়ুদার মহেশ হরিজন ৩ জুন নমুনা দেন। ১২ জুন তাঁদের নমুনার ফল ‘পজিটিভ’ আসে। নমুনা দেওয়ার পর তাঁরা ১১ জুন পর্যন্ত হাসপাতালে কাজ করেছেন। তাঁদের মতো অন্যরা নমুনা দিয়ে নিজেদের মতো করে অবাধে চলাফেরাসহ কাজ করছেন। এতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনার বিস্তার আরও অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে প্রভাষক অভিজিৎ রায়, মইদুল ইসলাম, স্কুলশিক্ষক মাহমুদুল হক ও সাবিকুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা নমুনা দিচ্ছেন, তাঁরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংক্রমণ তো বাড়বেই। দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা দরকার। তাঁরা বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সব বিভাগকে সমন্বয় করে কাজ করলে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যাঁরা এখন নমুনা দিচ্ছেন, তাঁদের কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে রাখতেই হবে।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় ল্যাব নেই, তাঁরা সবাই নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। যে কারণে নমুনার জট লেগে আছে। আগে ১০০ নমুনা আইসিডিডিআরবিতে পাঠাতাম। এখন এক দিন পরপর গড়ে ৪৫০টি নমুনা পাঠানো হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষও বিনা কারণেই নমুনা দিতে আসছেন। আমরা অযথা নমুনা না দিতে প্রচারণা চালাচ্ছি। জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট—এই চারটির মধ্যে একাধিক সমস্যা না থাকলে নমুনা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন।’