করোনায় মেট্রোরেলের কাজ প্রায় থেমে গেছে

করোনার প্রভাবে থেমে গেছে মেট্রোরেলের কার্যক্রম। ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে নির্মাণকাজ। গতকাল বিকেলে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায়।  তানভীর আহাম্মেদ
করোনার প্রভাবে থেমে গেছে মেট্রোরেলের কার্যক্রম। ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে নির্মাণকাজ। গতকাল বিকেলে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায়। তানভীর আহাম্মেদ

করোনা পরিস্থিতির কারণে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ প্রায় থেমে গেছে। গত ২ মাসে ১ শতাংশ কাজও হয়নি। কাজের জন্য এখন দেশি শ্রমিক পাওয়া গেলেও বিদেশি পরামর্শকেরা কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ শুরু করলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দিয়েছে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলেছে, বাংলাদেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ বা ২০০–তে না নামলে তাঁরা কাজে ফিরবেন না। আর কাজ শুরু করলেও কর্মীদের জন্য ঢাকায় হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দিতে হবে, যাতে কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে পারেন।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, মে মাস পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত অগ্রগতি ছিল ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত ২ মাসে ১ শতাংশেরও কম কাজ হয়েছে। সেটাও হয়েছে জাপানের কারখানায় কিংবা টেবিলে বসে। এখন ‘লকডাউন’ উঠে যাওয়ার পর উত্তরার ডিপো ও মিরপুর ডিওএইচএসের কাছে লেক রোডে মাত্র ৮০ জন শ্রমিককে দিয়ে টুকটাক কাজ শুরু হয়েছে।

এই প্রকল্পে কর্মকর্তা, কর্মচারী, পরামর্শক, ঠিকাদারসহ প্রায় ৯ হাজার লোক নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে হাজারখানেক বিদেশি নাগরিক। তাঁদের মধ্যে প্রায় আড়াই শ বিশেষজ্ঞ পরামর্শক। যাঁদের বেশির ভাগই জাপানি নাগরিক। আছেন ভারতসহ অন্য দেশের নাগরিকও। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে বেশির ভাগ পরামর্শক নিজ দেশে চলে গেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের নাগরিকেরা কাজ করছিলেন। তাঁদেরও বেশির ভাগ চলে গেছেন। এখন ভারত, থাইল্যান্ড, চীনের অল্প কিছু পরামর্শক-কর্মকর্তা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের শীর্ষে পরামর্শক আর সবার নিচে কর্মী। এর মাঝখানে নানা স্তর আছে। তবে কর্মী ও পরামর্শক ছাড়া কাজ করা অসম্ভব। বড় প্রকল্পের পরামর্শকেরা খুবই অভিজ্ঞ, প্রায় সবাই জ্যেষ্ঠ নাগরিক। বাংলাদেশ বর্তমানে করোনার যে পরিস্থিতি, তাতে তাঁদের এখন আনা কঠিনই। এ অবস্থায় বিদেশ থেকেই তাঁদের কাজে লাগানোর চেষ্টা চালাতে হবে।

করোনা পরীক্ষার শর্ত

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, প্রকল্পের কাজে দক্ষ–অদক্ষ দুই ধরনের শ্রমিক নিয়োজিত ছিলেন। এঁদের কেউ বিদেশি, কেউ দেশি। আর কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। একটা ছাড়া অন্যটা অচল। ‘লকডাউন’ ওঠার পর দেশি শ্রমিকদের এখন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যেসব বিদেশি শ্রমিক ও পরামর্শকেরা চলে গেছেন, তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এখনো পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ হলেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁরা আসতে রাজি হচ্ছেন না। তা ছাড়া জাপানি পরামর্শকেরা সবার করোনা পরীক্ষা ও পরামর্শকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করার শর্ত দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে তাদের চু্ক্তি হয়েছে। আরও তিন-চারটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চু্ক্তির চেষ্টা চলছে। সরকারি কিছু হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া জাপান-বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ঢাকার একটি হাসপাতালের সঙ্গে কথাবার্তাও এগোচ্ছে, চুক্তি হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমাধান দিতে পারেনি

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের শর্ত পেয়ে ১ জুন ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, মেট্রোরেল প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯ হাজার মানুষ কাজ করেন। তাঁদের প্রত্যেককে করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করালে সরকারের অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় দুটি বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি বিদেশিরা করোনায় আক্রান্ত হলে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে, তা চিহ্নিত করে দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এ বিষয়ে গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তাদের বৈঠকও হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো ইতিবাচক সমাধান দিতে পারেনি।

>

বিদেশিদের কঠিন শর্ত
প্রকল্প এলাকায় বুথ বসিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে
চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দিতে হবে

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, এ ধরনের আবেদন আরও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই সক্ষমতা নেই। লক্ষণ ছাড়া কারও নমুনাও নেওয়া হচ্ছে না। কিটেরও সংকট আছে। এ অবস্থায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকেও এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ফি এবং নিজেদের টাকায় বিদেশিদের চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এতেও খুব একটা সাড়া মেলেনি। এখন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

প্রকল্পের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা মনে করে, জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করে কেউ মারা গেলে তাদের বদনাম হবে। এই জন্যেই তারা কঠোর শর্ত দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করছে। ওই কর্মকর্তারা বলেন, পরামর্শক ও ঠিকাদারের অধীনে কাজ করা বিদেশিদের সাধারণ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি আছে। তবে করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার খবর জেনে তারা সরকারের সহায়তা চাইছে।

ব্যয় বাড়বে

উত্তরা থেকে মতিঝিলি পর্যন্ত উড়ালপথে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। প্রথম দফায় গত বছর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ চালু হওয়ার কথা ছিল। পরে সরকার সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পুরো মেট্রোরেল একসঙ্গে চালু করার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে আগামী দেড় বছরের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের না আসা, স্বাস্থ্যবিধির কঠিন শর্ত এবং করোনায় বিভিন্ন দেশ থেকে মালামাল আনার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়েছে ডিএমটিসিএল।

এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে যাবে। ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে আরও কী পরিমান ব্যয় বাড়বে, তা অবশ্য এখনই কেউ আন্দাজ করতে পারছেন না। তবে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কিছুটা ব্যয় বাড়বে। কিন্তু অন্য কাজে সাশ্রয় হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করার বিষয়ে এম এ এন সিদ্দিক বলেন, করোনা পরিস্থিতি আসলেই সমস্যায় ফেলেছে। জুনে এক সেট ট্রেন জাপান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু এই দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ। এখন যেহেতু ট্রেন আসতে পারছে না, তাই জাপানে আরও ট্রেন নির্মাণের কাজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে কৌশল করা হচ্ছে। আসলে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

টুকটাক কাজ শুরু

প্রকল্প সূত্র জানায়, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও রেললাইন স্থাপনসংক্রান্ত কাজ সীমিতভাবে শুরু হয়েছে। মিরপুর ডিওএইচএসের কাছে (লেক রোড) উড়ালসড়কের কাজও টুকটাক চলছে। এসব কাজের জন্য ৮০ জনকে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসার পর প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন শেষে তাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ১০ জনের একেকটা দল গঠন করে ৫০–১০০ গজ দূরে দূরে কাজের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। থাকার জায়গাতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার
জন্য কোথাও দেয়াল, কোথাও দূরে দূরে বিছানা বসানো হচ্ছে।

কাজের বাস্তব অবস্থা

প্রথমে উড়ালপথ তৈরি করা হচ্ছে। এর ওপর বসানো হচ্ছে রেললাইন ও স্টেশন। আর ইঞ্জিন–কোচ তৈরির কাজ হচ্ছে জাপানে। এর বাইরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর কাজও হচ্ছে।

প্যাকেজ–১–এর অধীনে উত্তরায় ডিপোর মাটি উন্নয়নের কাজ পায় জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। তারা ২০১৮ সালেই কাজ শেষ করেছে।

সেই ডিপোতে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পেয়েছে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান–থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি ও চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এটি প্যাকেজ–২ নামে পরিচিত। ঠিকাদার কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে। শেষ করার কথা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। কাজ এগিয়েছে ৫৮ শতাংশ। ছোট–বড় ৫২টি অবকাঠামোর কাজ হচ্ছে ডিপোর ভেতরে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়ালপথ নির্মাণের কাজ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার উড়ালপথ এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ পায় ইতালিয়ান–থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। এই অংশের কাজ প্যাকেজ–৩ ও ৪ নামে পরিচিত।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালের আগস্টে কাজ শুরু করে। চলতি আগস্টেই কাজ শেষ করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। প্রায় ৫ কিলোমিটার পথে রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান আছে। চলছে স্টেশনেরও কাজ। সময় বাড়াতে হবে।

আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার উড়ালপথ ও তিনটি স্টেশন নির্মাণের কাজ যৌথভাবে পায় জাপানের টেক্কেন, বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড ও জাপানের আবেনিক্কো। অন্যদিকে কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার উড়ালসড়ক ও চারটি স্টেশন নির্মাণের কাজ পায় জাপানের সুমিতোমো মিটসুই কনস্ট্রাকশন ও ইতালিয়ান–থাই কোম্পানি। এটি প্যাকেজ–৫ ও ৬–এর অন্তর্ভুক্ত।

এই দুটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের আগস্টে। শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের আগস্টে। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশের কাজ এগিয়েছে ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

প্যাকেজ–৭–এর আওতায় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও রেললাইন স্থাপনের কাজ হচ্ছে। ঠিকাদার জাপানের মারুবেনি ও ভারতের এলঅ্যান্ডটি (যৌথ)। এই প্যাকেজের কিছু কাজ প্রকল্প এলাকায় এবং কিছু কাজ জাপান ও ভারতে হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৩৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মেট্রোরেলের ইঞ্জিন–বগি এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি বসানোর কাজটি হচ্ছে প্যাকেজ–৮–এর আওতায়। এ কাজটি পেয়েছে জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি–মিটসুবিশি কনসোর্টিয়াম। ইঞ্জিন–কোচের ডিজাইন ও নির্মাণের পুরো কাজ তাঁরা করছে। শুরুতে প্রায় সব কাজই হচ্ছে জাপানে। শেষের দিকে ট্রেন নামানো, পরীক্ষামূলকভাবে চালানো এবং কারিগরি যন্ত্রপাতির কাজ হবে বাংলাদেশে।

ঠিকাদার ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করেছে। তবে ইঞ্জিন–বগি নির্মাণ শুরু হয় গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। একটি বগি দিয়ে নির্মিত মকআপ ট্রেন গত ডিসেম্বরে এসেছে। এটি দিয়ে প্রকল্পের ইনফরমেশন সেন্টার বানানো হয়েছে। ছয়টি বগি দিয়ে যাত্রী পরিবহনের মূল এক সেট ট্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি জুন মাসেই এটি বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আসতে পারবে না বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে। কারণ, এই ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নামানো এবং ঢাকায় আনার পর তা প্রকল্প এলাকায় স্থাপনসহ যাবতীয় কাজ জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষ কারিগর ছাড়া সম্ভব নয়। এ জন্যই তা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আরও চার সেট মেট্রোট্রেন নির্মাণের কাজ জাপানে চলমান আছে।

এখন করণীয়

অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, দেশে যেসব বিদেশি পরামর্শক আছেন তাঁদের দিয়ে কাজ শুরু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দিকে তাঁকিয়ে থাকলে হবে না। প্রকল্পের টাকায় নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজস্ব ক্লিনিক, সুরক্ষাব্যবস্থা, কর্মীদের বিচ্ছিন্ন রেখে সংক্রমণ ঠেকানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকেও একই পথে হাঁটতে হবে। এতে খরচ বাড়লেও তা মেনে নিতে হবে। এ ছাড়া কাজ শুরুর পর আরও সমস্যা দেখা দেবে। যেমন ঠিকাদার বলবে তাঁর যন্ত্রপাতি, লোকবল বসে থেকেছে। এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ নিয়ে মনোমালিন্য হবে। এ জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।