খুলনায় চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, গ্রেপ্তার ৪

খুলনা নগরের এক চিকিৎসককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কর্মবিরতি পালন করছেন খুলনার চিকিৎসকেরা। এতে শুধু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও করোনা হাসপাতাল ছাড়া সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

রোগীর স্বজনদের মারধরে খুলনা নগরের গল্লামারী এলাকার রাইসা ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক মো. আবদুর রকিব খান (৫৯) মারা যান। এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে নগরের সাত রাস্তা মোড় এলাকায় অবস্থিত বিএমএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন চিকিৎসকেরা। পরে এক জরুরি বৈঠক করে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখার নেতারা।

এদিকে হঠাৎ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে রোগীরা। আজ সকাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীরা ভিড় করতে থাকে। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে তারা।

যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন রোকেয়া বেগম। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই নারী সকাল থেকে বহির্বিভাগে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে বেলা ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, এক মাস আগে বহির্বিভাগের এক চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক মাস পর আবার দেখানোর কথা ছিল। এ জন্যই তিনি এসেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন।

রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে খুলনা জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মেহেদী নেওয়াজ বলেন, চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় রোগীরা বিপাকে পড়েছে। অন্যদিকে দাবি অনুযায়ী এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। দুপুরের দিকে বিএমএ খুলনা শাখার জরুরি বৈঠক হবে। ওই বৈঠক থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হতে পারে।

চিকিৎসক রকিব খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল দুপুরের দিকে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মো. সাইফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। মামলায় মোট চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করে। পরে ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অন্যদিকে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এজাহারভুক্ত প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এ নিয়ে এজাহারভুক্ত তিন আসামি গ্রেপ্তার হলেন। আর এজাহারবহির্ভূত আসামি রয়েছেন দুজন।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ আসামিদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। বুধবার রাতেই চারজনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের আদালতের কাছে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।

সোমবার রাইসা ক্লিনিকে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাঁর স্বজনেরা রকিব খানকে মারধর করেন। এতে মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাত পান তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ওই দিন রাত ২টার দিকে তাঁকে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকালে সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসকেরা দেখতে পান আঘাতের কারণে তাঁর মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রকিব খানের স্বজনেরা তাঁকে ঢাকায় না নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে মারা যান রকিব খান।

রকিব খান বাগেরহাট সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষ। রাইসা ক্লিনিকের ওপরের তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন।