ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭৬ জন কোভিডে আক্রান্ত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর ৭৬ জন সদস্য করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৯ জনই পুলিশের সদস্য। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের ২ জন, র‌্যাবের ২১ জন, আনসারের ৩ জন ও ফায়ার সার্ভিসের ১ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর পুলিশের কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ৪৯ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য ভাঙ্গা থানার। এই থানায় ৩৩ জন পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া সালথা থানায় তিনজন, বোয়ালমারী থানার দুজন, আলফাডাঙ্গা থানার একজন, ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে কর্মরত সাতজন এবং ট্রাফিক পুলিশের দুজন আছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কাউকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, কেউ ফরিদপুর পুলিশ হাসপাতালে, পুলিশ ব্যারাকে ও নিজ আবাসনস্থলে চিকিৎসাধীন।

জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ফরিদপুরে যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের চিকিৎসা চলছে। তাঁদের সবার শারীরিক অবস্থা ভালো। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এড়িয়ে কাজ করার জন্য কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সার্বক্ষণিক রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তাঁরা ভূমিকা রাখবেন। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার পাশাপাশি ইতিমধ্যে যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত সুস্থ করে তোলার সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের দুই সদস্য কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থিত নার্সিং কোয়ার্টারে চিকিৎসাধীন। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া দুই পুলিশ সদস্যকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং কোয়ার্টারে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একজনের নমুনা পরীক্ষায় ইতিমধ্যে নেগেটিভ এসেছে। অন্যজনও আরোগ্যের পথে।

এদিকে র‌্যাব-৮ ফরিদপুরের কোম্পানি অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দেবাশীষ কর্মকার জানান, ফরিদপুরে কর্মরত ডিএডি পদধারীসহ ২১ র‌্যাব সদস্যের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, র‌্যাবের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য বরিশালে একটি মিনি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। আক্রান্ত সদস্যরা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. নিজামউদ্দিন জানান, তাঁদের সংস্থার একজন ফায়ারম্যানের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁকে সংশ্লিষ্ট ফায়ার স্টেশনের তিনতলা ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা কার্যালয়ে কর্মরত এক আনসার সদস্য নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ফরিদপুরের অধিবাসী এক কনস্টেবল ঢাকায় মারা গেছেন। তাঁকে ফরিদপুরের সালথায় নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা আনসার কমান্ডার মো. সেলিমউজ্জামান বলেন, ফরিদপুরে কর্মরত তিন আনসার সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদে কর্মরত এবং একজন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে কর্মরত। এর মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় কর্মরত ২০ ব্যাটালিয়নের আনসার সদস্য আবদুর রউফ প্রধান (৫৫) মারা গেছেন কোভিডে। তিনি ফরিদপুরে কর্মরত অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ১১ জুন। ১৪ জুন দিবাগত শেষ রাতে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার খামার নড়াইল গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।

এ ছাড়া ঢাকায় কর্মরত ফরিদপুরের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল আলমগীর হোসেন (৫৫) ৮ জুন দুপুরে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ডিএমপি হাজারীবাগ থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁকে নিজ বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও দুটি বিভাগ কর্মরত রয়েছে। বিভাগ দুটি হলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও নৌ পুলিশ। ওই দুই বিভাগের দুই পুলিশ সুপার যথাক্রমে মো. মাহফুজুর রহমান ও আবদুল্লাহ আরেফ প্রথম আলোকে জানান, এখন পর্যন্ত তাঁদের সব সদস্য সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।