ভারী বর্ষণে নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ চরমে

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকায়। ছবি: দিনার মাহমুদ
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকায়। ছবি: দিনার মাহমুদ

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের ভেতরসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পানি জমে কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানি উঠে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছে ডিএনডির বাঁধের ভেতরে বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষ। ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

ডিএনডি পাম্প হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে বাঁধের ভেতরে যে পরিমাণ জমে সেই পানি নিষ্কাশন করতে সময় লাগে ১০ দিন। তাই বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ৫ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে পানি নিষ্কাশন করতে। করোনার কারণে জনবল সংকটে পানি নিষ্কাশন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য ডিএনডি প্রকল্পের স্থাপিত ২৯৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও বুধবার রাতের ভারী বর্ষণের পর ডিএনডির বাঁধের ভেতরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার টাগারপাড়, ইসদাইর, গাবতলী, উত্তর মাসদাইর, দক্ষিণ সস্তাপুর, সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, সেহাচর, লাল খাঁ, লামাপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি, পাইনাদিসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় হাঁটু পানি জমে গেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় কোমর পানি উঠে গেছে। ভারী বর্ষণে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া, দেওভোগ আখড়াপাড়া, উকিলপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে জমেছে হাঁটু পানি।

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি ঢুকে গেছে ঘরে। সেই পানি সেচে বাইরে ফেলছেন এক গৃহিণী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি ঢুকে গেছে ঘরে। সেই পানি সেচে বাইরে ফেলছেন এক গৃহিণী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

গাবতলী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বর্ষণে হাঁটু পানি জমে গেছে। বাড়িঘর পানি তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহনের পরিবর্তে নৌকা চলছে। জলাবদ্ধতার ভোগান্তির কারণে লোকজন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ হালিম বলেন, এক রাতের ভারী বর্ষণে পুরো এলাকায় হাঁটু পানি জমে গেছে। পানি সরছে না। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর জানান, ডিএনডিবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের খাল দিয়ে পানি সরছে না। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর ডুবে গেছে।

ডিএনডির জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গে শিমরাইল ডিএনডি পাম্প হাউসের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার বলেন, চারটি পানি নিষ্কাশনের পাম্পের মধ্যে তিনটি চালু আছে। একটি পাম্প বিকল আছে। ছোট ছোট আরও কিছু পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।

এদিকে ডিএনডির প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সৈয়দ মোস্তাকিম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনডি প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুরোদমে কাজ চলছে। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য তাঁদের স্থাপিত দুটি নতুন পাম্প (২৯৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন) অস্থায়ী ভিত্তিতে জেনারেটরের মাধ্যমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বাইপাস ক্যানেল কেটে সেগুলো চালু করা হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কমে আসবে।

২০১৭ সালে অক্টোবরে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প হাউস স্থাপন, খাল খনন, কালভার্টসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। চলতি বছরে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের জন্য আরও ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। বর্তমানে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।