দিনমজুরি করেও জিপিএ-৫, এখন দুশ্চিন্তা

জিপিএ-৫ পাওয়া ভূপেন চন্দ্র রায় দিনমজুর হিসেবে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছে। তারাগঞ্জ, রংপুর। ছবি: প্রথম আলো
জিপিএ-৫ পাওয়া ভূপেন চন্দ্র রায় দিনমজুর হিসেবে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছে। তারাগঞ্জ, রংপুর। ছবি: প্রথম আলো

ভূপেনের বাবা দিনমজুর। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাতে যা জোটে, তা দিয়ে পরিবারের চার সদস্যের ঠিকমতো দুই বেলার খাবার জোগানো কঠিন। তাই সংসার ও লেখাপড়ার খরচ জোটাতে ভূপেন কখনো কৃষিশ্রমিকের কাজ করে, আবার কখনো ইটভাটায় গিয়ে শ্রম বেচে।

এই ভূপেন এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু এই সাফল্যেও তার মুখে হাসি নেই। ছেলের সাফল্যে আনন্দের জোয়ারের ভাসেননি মা–বাবা। কেন? সাধ আর সাধ্যে যে যুদ্ধ লেগেছে! ভূপেনের স্বপ্ন চিকিৎসক হবে। কিন্তু অভাব তাতে বাধার দেয়াল গড়েছে। সেই দেয়ালের ইট-সিমেন্টের গাঁথুনি খুবই শক্ত। এই বয়সে দিনমজুরি করা ভূপেন তা ভাঙতেই পারছে না।

ভূপেনের পুরো নাম ভূপেন চন্দ্র রায়। রংপুরের তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সে। তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর খিয়ারপাড়া গ্রামের জগেন চন্দ্র রায় ও ভারতী রানীর ছেলে ভূপেন। দিনমজুরি করে অন্যের দেওয়া জামা পরে, প্রায় দিন না খেয়ে স্কুল যেতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এখন কী হবে! লেখাপড়ার খরচ কীভাবে জোগাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে সে।

তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ভূপেনদের বাড়ি। তার পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের সহায়সম্বল বলতে বসতভিটার আড়াই শতক জমির ওপর মাটির দেয়ালের দুটি খড়ের ঘর। সেখানে কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকে দুই ভাইবোন ও মা–বাবা। বাবা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

সম্প্রতি একদিন ভূপেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মাটির দেয়ালে ঘেরা খড়ের দুটি ঘরের একটিতে দুটি চৌকি পাতা। অন্যটির এক পাশে বর্গা নেওয়া ছাগল বাঁধা, নেই কোনো চেয়ার-টেবিল। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেল, ভূপেন পাশের তাপস রায়ের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে ধান কাটা–মাড়াইয়ের কাজ করতে গেছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ভূপেন বলে, ‘অসুস্থ বাবা কাজ করতে পারেন না। মা কষ্ট করে সংসার চালান। আমি কখনো দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে, কখনো ইটভাটায় কাজ করে সংসারে সহায়তার পাশাপাশি পড়ার খরচ চালিয়েছি। আমার ইচ্ছা পড়ালেখা করে ডাক্তার হব। গরিব মা–বাবার সংসারে সেটা কি সম্ভব?’ অজান্তেই ঘামে ভেজা ভূপেন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

নিজ বাড়ির সামনে মা–বাবার সঙ্গে ভূপেন চন্দ্র রায়। তারাগঞ্জ, রংপুর। ছবি: প্রথম আলো
নিজ বাড়ির সামনে মা–বাবার সঙ্গে ভূপেন চন্দ্র রায়। তারাগঞ্জ, রংপুর। ছবি: প্রথম আলো

সেখানে পাওয়া গেল ভূপেনের মাকেও। মা ভারতী রানী বলেন, ‘পেটভরে খাবার পাই না। ছাওয়াটাক পড়ার টাকা কোনটে পাইম কন?’

কুর্শা ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভূপেনদের পরিবারের অবস্থা এতই করুণ যে ঠিকমতো দুই বেলার খাবার জোটে না। ভূপেনদের কষ্ট দেখে কয়েক দিন আগেও তার মায়ের নামে ১০ কেজি ভিজিএফের চালের ব্যবস্থা করেছি।’

তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ভূপেন খুবই মেধাবী। অভাব তাকে আটকাতে পারেনি। সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারলে সে অনেক দূর যেতে পারবে।’

ভূপেনকে সহায়তা করতে চাইলে: বিকাশ নম্বর–০১৭৫৫২৩২৬৭৩.