এভাবেই কি চলবে জীবনটা

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

আমি কখনোই ভাবি না আমি জীবনে কী হারিয়েছে। বরং আমি চিন্তা করি জীবনে কী কী পেয়েছি। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে থাকতে সবার মতো আমিও যে বিরক্তবোধ করিনি, তা কিন্তু নয়। হ্যাঁ! আমিও করেছি। কিন্তু যখন চিন্তা করি আমি কী কী পেয়েছি, তখন মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে ওঠে। কারণ, আল্লাহ আমাকে এবং আমার পরিবারকে এখনো সুস্থ রেখেছেন।

করোনাকালে মানুষকে মানুষের পাশে যেমন দাঁড়াতে দেখেছি, তেমনি কিছু মানুষের হিংস্র রূপও দেখেছি। পুলিশ, ডাক্তার, অন্যান্য সেবাপ্রদানকারী সবার প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে ওঠে। আমাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আজ তাঁরা মৃত্যুমুখে। ভাবলেই বুক কেঁপে ওঠে। আমি, আমার পরিবার হোম কোয়ারেন্টিনে থেকেই যতটা সম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। খুব ইচ্ছা আছে নিজের টাকায় সবাইকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাব। কিন্তু আল্লাহ আমাকে এখনো সেই সামর্থ্য দেননি।

আম্মুকে বলেছিলাম, এই রমজানের মতো সেরা রমজান আমার জীবনে আর আসিনি। কাছের আরেকজন মানুষকে বলেছিলাম, জীবনে এত তৃপ্তি নিয়ে কখনো ইবাদত করিনি। হ্যাঁ! আমি ছোটবেলা থেকেই নামাজ, কোরআন দুইটাই পড়তাম। সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতাম। কখনোই চাইতাম না আমার নামাজ কাজা হোক। কিন্তু জীবনের ব্যস্ততার কারণে দেখা গেল আমি আজ পাঁচ ওয়াক্ত পড়লেও কাল পড়তে পারিনি। আবার দেখা গেল, বাইরে থেকে এসে শরীরের ক্লান্তির জন্য আমি কাজা নামাজটাও আদায় করতে পারিনি। অনেক সময় এমনও হয়েছে, ইফতারের অনেক পরে বাসায় পৌঁছালাম। খুব আপসোস হতো, এভাবেই কি চলতে থাকবে জীবনটা।

কিন্তু এবার সব একটু অন্য রকম হলো। সম্পূর্ণ সময়টুকু বাসায় দিতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ।

গত কয়েক দিনে আমার পরিবারকে আমি আরও বেশি করে বুঝেছি। পরিবারের মানুষগুলোকে আরও বেশি করে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার আব্বুর এবার ঈদটা আমাদের সঙ্গে করার কথা ছিল। এবারের ঈদ নিয়ে অনেক প্ল্যান করেছিলাম। কখনো এত প্ল্যান করিনি। কারণ, আব্বুর সঙ্গে কখনোই একসঙ্গে ঈদ করা হয় না। যেহেতু আমার আব্বু ডিফেন্সে, তাই সব সময় পরিবারকে চাইলেও সময় দিতে পারেন না। আব্বু পরিবার ছাড়া ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন। আব্বু সব সময় বলেন, জীবনে কখনো মন খারাপ করবেন না। বরং আশপাশের সবার অবস্থার কথা চিন্তা করে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করবে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সবাই দূরে দূরে আছি, কিন্তু সুস্থ তো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।

খুব মিস করি আমার বন্ধু-বান্ধব, আমার কলেজটাকে। এই রমজানে এক বান্ধবীকে হারিয়েছি। খুব কষ্ট পেয়েছি।

আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে কখনোই ভালোবাসি না। বরং আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি, আর তা বাস্তবে রূপ দিতে ভালোবাসি। এই হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে সময়টাকে কাজে লাগানোই যুক্তিযুক্ত। নিজের ভেতরে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকেও চাইলে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনতে পারেন। দেখবেন অন্তত এই বিরক্তিকর সময়টাও স্বস্তিকর মনে হবে।

সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া, সবাই যাতে করোনার কবল থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক, সুস্থ রাখুক। কেননা, দিন শেষে এটাই নির্মম সত্য, আমি হয়তো ভালো আছি, কিন্তু আমার আশপাশের আর দশটা মানুষ ভালো নেই। দোয়া করি তাদের জন্য খুব।❤

* শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম। পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। [email protected]