মৃত্যুর আগের নমুনা 'পজিটিভ', পরে 'নেগেটিভ'

পঞ্চগড়ে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ (৭৫)। মৃত্যুর আগে নেওয়া নমুনা পরীক্ষার ফল জানা গেছে বৃহস্পতিবার রাতে। এতে তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। অথচ, পরিবার এত দিন জেনে এসেছে, আব্দুস সামাদ করোনায় সংক্রমিত ছিলেন না। কারণ, মৃত্যুর পরপরই তাঁর নমুনা নেওয়া হয়েছিল। পরদিনই ওই পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। তাতে বলা হয়েছিল, তিনি করোনা ‘নেগেটিভ’।

আব্দুস সামাদ পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের মৌলবীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, অ্যাজমার রোগী আব্দুস সামাদের মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্ট হতো। গত ১১ জুন তাঁর জ্বর ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। সেখানে ১৩ জুন সকালে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া তাঁর বুকের এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। এক্স-রে প্রতিবেদনে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসকেররা বিকেলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে চিকিৎসকেরা তাঁকে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠান। সেখানে রাত আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরপরই সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে। ১৪ জুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। ওই দিন বিকেলে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, তিনি করোনা ‘নেগেটিভ’।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ করোনায় সংক্রমিত ছিলেন না, পরিবারের সদস্যরা এত দিন এটাই জেনে আসছিলেন। কিন্তু সেই ভুল ভেঙেছে বৃহস্পতিবার। এদিন সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, আব্দুস সামাদ করোনায় সংক্রমিত ছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ১৩ জুন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষার জন্য দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার তাদের হাতে এসেছে। এতে আব্দুস সামাদ করোনায় সংক্রমিত ছিলেন নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর আগে আমরা যে নমুনা সংগ্রহ করেছি, তাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর পরে রংপুরে তাঁর নমুনা নেওয়া হয়েছিল সেই পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে বলে আমরাও শুনেছি। তবে আমাদের পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে এটাকেই আমার সঠিক হিসেবে ধরি। মৃত্যুর পরে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফল অনেক সময় নেগেটিভ আসতেও পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে যাকে আমরা ফলস নেগেটিভ হিসেবে ধরে থাকি।’