তারাগঞ্জে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

হাটে গরু বিক্রি করতে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলছে কেনাবেচা। আজ শুক্রবার রংপুরের তারাগঞ্জে। ছবি: প্রথম আলো
হাটে গরু বিক্রি করতে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলছে কেনাবেচা। আজ শুক্রবার রংপুরের তারাগঞ্জে। ছবি: প্রথম আলো

পশুর হাটে গিজগিজ করছে পশু আর মানুষ। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ পশু কিনে ট্রাকে তুলছেন। অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই, কারও কারও মাস্ক থাকলেও তা নামানো থুতনিতে। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে পশু কেনাবেচা চলছে। আজ শুক্রবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা করব কী? পশুর হাটে অনেক লোক। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেউই তা মানছেন না। আমরা বললেও শুনছেন না। মনে হচ্ছে পুরোনো পশুর হাটের রূপ ফিরে আসছে। পশু নয়, এ যেন করোনা ছড়ানোর হাট।’

উপজেলার ১৮টি হাটবাজারের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। বর্তমানে প্রতি হাটে ৮০০ থেকে ৯০০ পশু কেনাবেচা হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে প্রায় সব ধরনের দোকান খুলে গেছে। মৌসুমি ফলের দোকান ও মুদিখানার দোকানে যথেষ্ট ভিড়। হাটের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকেই খোশগল্প করছেন। তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। আলু ও সবজির বাজার ঘিরে কেনাকাটা করছেন প্রচুর মানুষ। মাংসের বাজার, হাঁস-মুরগির বাজারে গিয়ে মনে হলো যেন কেনাকাটার উৎসব চলছে। গা ঘেঁষে হাঁস-মুরগি, মাংস কিনছেন অনেকে। সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতো।

হাটে গরু বিক্রি করতে আসা বুড়িরহাট গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন বলেন, ‘মেলা দিন থাকি বাড়িত আছি। টাকা কড়ি নাই। আইজ হাটোত গরু বেছপার আলছি। কিন্তু হাটোত আসি মনে হওছে মানুষের কোনো করোনার ভয় নাই। ঠেলাঠেলি করি কেনাবেচা চলছে।’ হাটে বাজার করতে আসা ঘনিরামপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, ‘ভাই, সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে। কেউ তো সামাজিক দূরত্ব মানছে না। অনেকে মুখে মাস্কও ব্যবহার করছেন না। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের কিছু বলছেন না। হুড়াহুড়ি করে গা ঘেঁষে কেনাকাটা চলছে।’

বেলা দেড়টার দিকে ওই বাজারের একটি চায়ের দোকানে ৫০-৬০ জনকে চা পান করতে দেখা যায়। কারও মুখেই মাস্ক নেই। মাইদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘অনেক দিন দোকানে বসে চা খাওয়া হয় না। তাই একটু করোনা নিয়ে গল্পগুজব করছি। মাস্ক ব্যাগে আছে।’ তারাগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের মোড়ে যাত্রী তুলছেন ইজিবাইকচালক মিনারুল ইসলাম। মাস্ক ছাড়া যাত্রী তুলছেন কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এল্যাও মানুষ মুখোত মাস্ক না পরি বাইরোত আইসোছে। ওমাক মুই যদি না তোলোং, অন্য কায়ও তুলবে। সে জন্যে তুলছুং।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন মাইকিংও করা হচ্ছে। মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করার কথা বিক্রেতাদের। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।