অক্সিজেন 'ফ্লো মিটার' চুরি, হাসপাতাল কর্মচারী ও ক্লিনিক ব্যবস্থাপক গ্রেপ্তার

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ‘ফ্লো মিটার’ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন। আজ শনিবার বগুড়া সদর থানায়। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ‘ফ্লো মিটার’ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন। আজ শনিবার বগুড়া সদর থানায়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ‘ফ্লো মিটার’ চুরির অভিযোগে হীরালাল (৪০) নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চোরাই সরঞ্জাম কেনার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপকসহ আরও এক কর্মচারীকে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া দুটি ‘ফ্লো মিটার’ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের ঠনঠনিয়া মায়া মোটরস এলাকা থেকে প্রথমে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হীরালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঠনঠনিয়া এলাকার শান্ত পলি ক্লিনিকে বগুড়া সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া দুটি ফ্লো মিটার উদ্ধার করে। সেখান থেকে পুলিশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আলম (৪০) এবং ক্লিনিকের কর্মচারী ঠান্ডু মিয়াকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। ক্লিনিক ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আলমের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দহিলা গ্রামে এবং ঠান্ডু মিয়ার বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার পারটেখুর গ্রামে।

সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীদের অক্সিজেন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় ‘ফ্লো মিটার’। এই যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেনের প্রবাহ পরিমাপ করা হয়। গ্রেপ্তার কর্মচারী ‘ফ্লো মিটার’ দুটি তিন হাজার টাকায় ওই ক্লিনিকে বিক্রি করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন বলেন, হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি একজন চিকিৎসকের অক্সিজেন নেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নার্স স্টেশন থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হীরালাল একটি ফ্লো মিটার চেয়ে নেন। এ ছাড়া আরেকটি ওয়ার্ডের নার্সদের কাছ থেকে আরেকটি ফ্লো মিটার চেয়ে নেন। এ দুটি ফ্লো মিটার হাসপাতাল থেকে চুরি করে বাইরের একটি ক্লিনিকে বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া অক্সিজেনের একটি খালি সিলিন্ডার চুরি করার উদ্দেশ্যে হাসপাতালের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হীরালাল আগেও নানা জিনিস চুরি করায় তাঁর ওপর সন্দেহ হয়। হীরালালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হাসপাতাল থেকে দুটি ফ্লো মিটার চুরির করে বাইরের একটি ক্লিনিকে বিক্রির কথা স্বীকার করেন। শুক্রবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ফ্লো মিটার চুরির ঘটনায় সদর থানা পুলিশ প্রথমে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হীরালালকে আটক করে। হীরালাল স্বীকার করে, হাসপাতাল থেকে চুরি করা দুটি ফ্লো মিটার তিনি তিন হাজার টাকায় শহরের শান্ত পলি ক্লিনিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে শান্ত পলি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে চোরাই দুটি ফ্লো মিটার পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় সরকারি হাসপাতালের চোরাই ফ্লো মিটার কেনার কথা স্বীকার করলে ক্লিনিক ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আলম এবং কর্মচারী ঠান্ডু মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম জানান, তিনজনকেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিনের দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাঁদের তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।