ঝাড়ফুঁক দিয়ে করোনা তাড়ানোর সেই সাধুবাবার পর তাঁর ছেলেও করোনায় আক্রান্ত

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

রাজশাহীর বাগমারায় ঝাড়ফুঁক দিয়ে ‘করোনা তাড়ানোর’ সেই সাধুবাবার (৪৫) পর এবার তাঁর ছেলেও (১৮) করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। আজ শনিবার রাতে তাঁর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে করোনা ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হয়।

তিনিও তাঁর বাবার মতো করোনায় আক্রান্ত গাজীপুরফেরত পোশাকশ্রমিক দম্পতির সংস্পর্শে আসা। এ নিয়ে ওই দম্পতির সংস্পর্শে আসা এক শিশুসহ চারজন করোনা পজিটিভ হলেন। আর, বাগমারায় করোনায় সংক্রমিত বলে শনাক্ত হলেন মোট ১২ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জানান, উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে গাজীপুরফেরত এক দম্পতির ৩ জুন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর গত ৩০ মে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহীর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে তাঁদের বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

এর মধ্যে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন আশঙ্কায় ১ জুন রাতে মারিফত মতাদর্শী ব্যক্তিদের বাড়িতে ডেকে ঝাড়ফুঁক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় এই অতিথিদের ওই বাড়িতে আপ্যায়নও করা হয়। এই ঝারফুঁককালে প্রায় ২০ জন উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন (২ জুন) ওই নারীর স্বামী (৩০) গাজীপুরে চাকরিতে চলে যান। বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানার পর ৪ জুন উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন রোগীর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এরপর প্রশাসনের পক্ষে করোনায় আক্রান্ত গাজীপুরফেরত ওই নারী (২৫), তাঁর ১০ বছরের শিশুসন্তানসহ শাশুড়িকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে নেওয়া হয়। এদিকে, চাকরিতে চলে যাওয়া ওই যুবককে প্রশাসনের পক্ষে ফেরাতে এবং তাঁর মাধ্যমে করোনার বিস্তার রোধে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জুন ওই পোশাকশ্রমিক চাকরি থেকে ফিরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে ঢুকে পড়েন।

এদিকে করোনা তাড়ানোর জন্য বাড়িতে ঝাড়ফুঁক দেওয়ার আয়োজনে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ঝাড়ফুঁকের নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় ‘সাধুবাবা’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি এবং আক্রান্ত নারীর বড় ভাইয়ের (৪৫) নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীর ল্যাবে পাঠানো হয়। তাঁদের দুজনই করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত হন। এরপর পাশের ইউনিয়নের একটি গ্রামের দুই বছরের শিশুর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলে।

শিশুটি তার নানির বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া সাধুবাবার ছেলের শরীরেও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। আজ শনিবার তাঁরও পজিটিভ রিপোর্ট আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, এ নিয়ে গাজীপুরফেরত ওই দম্পতির সংস্পর্শে আসা দুই বছরের শিশুসহ চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। তাঁদের সবার চিকিৎসা চলছে। করোনা তাড়ানোর নামে বাড়িতে লোকজন ডেকে ঝাড়ফুঁক দেওয়ায় এর বিস্তৃতি ঘটেছে। এ নিয়ে বাগমারায় ১২ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হলেন। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।