হত্যার পর গৃহবধূর লাশ ফেলে রাখা হয় বাবার বাড়ির পাশে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় গৃহবধূকে শ্বাসরোধ ও ছুরিকাঘাতে হত্যার পর তাঁর বাবার বাড়ির পাশের রাস্তায় লাশ ফেলে রাখা হয়। গৃহবধূ রোজিনা খাতুন হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, গৃহবধূ রোজিনাকে তাঁর স্বামীর বাড়িতেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। নিহত গৃহবধূ রোজিনার স্বামী মেহেদী হাসান (৩০) ও সতিন নূরজাহান আখতারকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে নিহত রোজিনার বাবা মকবুল হোসেন বাদী হয়ে মেয়ের জামাই মেহেদী হাসান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী নূরজাহান আখতারকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় মেহেদী ও নূরজাহানকে প্রথমে আটক এবং পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ৪ মে মেহেদী হাসানের সঙ্গে রোজিনার বিয়ে হয়। মেহেদীর দ্বিতীয় বিয়ে এটি। বিয়ের পর রোজিনা তাঁর বাবার বাড়িতে ছিলেন। বিয়ের কথা জানতে পেরে মেহেদী হাসানের সঙ্গে তাঁর প্রথম স্ত্রী নূরজাহান আখতারের দ্বন্দ্ব চলছিল। মেহেদী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রোজিনাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ কথা জানতে পেরে গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে বিয়ের কাবিননামার নকল তুলতে যান রোজিনা। মুঠোফোনে তাঁর স্বামীকে কাবিননামার নকল তোলার বিষয়টি জানান। রোজিনার এ কথা তাঁর স্বামী বিশ্বাস করেননি। রোজিনা বাবার বাড়িতে আছেন কি না, তা যাচাই করতে রাতেই মেহেদী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যান। স্ত্রীকে না পেয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে নালিশ করে চলে যান। মেহেদী তাঁর স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। মুঠোফোনে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা চলছিল। একপর্যায়ে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে রোজিনার মুঠোফোন নম্বর ব্ল্যাক লিস্টে রেখে রিংটোন বন্ধ করে রাখেন মেহেদী।

পুলিশ সূত্র আরও জানায়, স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে রোজিনা রাতেই বাবার বাড়িতে ফেরেন। গভীর রাতে একটি ছুরি সঙ্গে নিয়ে একাই বাবার বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হরিসারা গ্রামে স্বামীর বাড়িতে যান তিনি। রোজিনা আসায় তাঁর স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেন। বাড়িতে ঢুকেই প্রথম স্ত্রীর সামনেই মেহেদীর সঙ্গে ঝগড়া লাগে। স্বামীর ওপর চড়াও হয়ে ছুরি মারতে উদ্যত হন রোজিনা। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরির আঘাতে সামান্য জখম হন মেহেদী। এতে রোজিনার ওপর তাঁর সতিন নূরজাহান প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন। পরে মেহেদী ও তাঁর প্রথম স্ত্রী নূরজাহান মিলে রোজিনার গলা চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর রোজিনা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পেটে ছুরিকাঘাত করেন মেহেদী। মৃত্যু নিশ্চিত হলে নিজেদের অটোরিকশায় লাশটি তুলে নেন মেহেদী ও নূরজাহান। গতকাল ভোরের দিকে রোজিনার লাশ তাঁর বাবার বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে রেখে যান তাঁরা।

আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মালিক বলেন, রোজিনার লাশ উদ্ধারের আগেই সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে তাঁর স্বামী মেহেদী হাসানকে আটক করা হয়। পরে তাঁর প্রথম স্ত্রী নূরজাহান আখতারকে আটক করে থানায় আনা হয়। তাঁদের দুজনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। আর মেহেদী ও নূরজাহানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, রোজিনা হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। স্বামী-সতিন মিলে রোজিনাকে হত্যা করেছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও মুঠোফোন মেহেদী হাসানের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে।