লজ্জাবতী বানর এখনো খাঁচায় আটকা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে উদ্ধার করা সংকটাপন্ন লজ্জাবতী বানর এখনো খাঁচায় আটকা। এই প্রাণী বনে অবমুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করছে না বলে অভিযোগ করেছে বন বিভাগ। এতে এই বানর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বন কর্মকর্তারা।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বন বিভাগ হস্তান্তরের ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে না বলে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামে গত আড়াই মাসের ব্যবধানে দুটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি ৬ জুন ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকোর বাগানবাজার এলাকার রাবারবাগান থেকে এবং আরেকটি গত ২ এপ্রিল একই উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের পূর্ব সোনাই গ্রামের আকাশমণিবাগান থেকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেন। পরে এগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া চিড়িয়াখানায় আগে থেকে আরও একটি লজ্জাবতী বানর ছিল।

লজ্জাবতী বানর বা বেঙ্গল স্লো লরিসকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন)২০২০ সালের তালিকায় সংকটাপন্ন (রেড লিস্ট) প্রজাতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

লজ্জাবতী বানর ছোট আকারের। এটি বেঙ্গল স্লো লরিস নামে পরিচিত। স্তন্যপায়ী শ্রেণির লরিসিডি পরিবারের সদস্য এই বানর বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনের তফসিল-১ অনুসারে সংরক্ষিত প্রাণী।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, লজ্জাবতী বানরগুলো দ্রুত গভীর বনজঙ্গলে অবমুক্ত করা প্রয়োজন। বানরগুলো হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি ও মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না।

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী এই সংকটাপন্ন প্রাণী খাঁচায় আটকে রাখার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন মো. ফরিদ উদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেন, লজ্জাবতী বানর মানুষের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। এরা বনেই থাকে। এভাবে আটকে রাখার কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

গত এপ্রিল ও মে মাসে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সামনে থেকে একটি করে দুটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ৪ মে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়ার মাঝিরঘাট জঙ্গলে একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব বানর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তা বনে অবমুক্ত করে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসেন বলেন, চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব ও হাটহাজারীর ইউএনওর নির্দেশে লজ্জাবতী বানর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। লকডাউনের মধ্যে গাড়ি জোগাড় করে ফটিকছড়ির হেঁয়াকো থেকে এ বানর আনতে অনেক কষ্ট হয়েছে। চিকিৎসার পর এ বানর সুস্থ আছে। আগেরগুলোও ভালোভাবে আছে। কোনো সমস্যা হয়নি।

বন বিভাগের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন বলেন, বন বিভাগকে অনেকবার অনুরোধ করা হয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বানরগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরিচালনা কমিটির প্রধান হচ্ছেন জেলা প্রশাসক, সদস্যসচিব হাটহাজারীর ইউএনও। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাণীগুলো নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বন বিভাগের লোকদের বলা হয়। কিন্তু তা তাঁরা করছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়া চিড়িয়াখানার কোনো কিছু কাউকে হস্তান্তরের সুযোগ নেই।

লজ্জাবতী বানরের বৈজ্ঞানিক নাম Nycticebus bengalensis। নিশাচর এই বানর দিনের বেলায় গাছের উঁচু ডালে নিজেদের আড়াল করে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। দিনের বেলা লোকালয়ে আসে না। সিলেট ও চট্টগ্রামের গভীর পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায়। এরা কচি পাতা, পোকামাকড়, পাখির ডিম খেয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, বনজঙ্গলের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে লজ্জাবতী বানর লোকালয়ে চলে আসছে। উদ্ধারের পর সেবা–শুশ্রূষা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চিড়িয়াখানায় রাখা ভালো পদক্ষেপ। তবে সত্যি কথা হচ্ছে, বনের প্রাণী বনে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর লজ্জাবতী বানরকে গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করা প্রয়োজন।