রাজধানীবাসীর মুক্তি মিলছে না এই বর্ষায়ও

উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মিরপুর পর্যন্ত নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। শনিবার দুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন সেনপাড়া পর্বতা এলাকায়।  ছবি: আশরাফুল আলম
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মিরপুর পর্যন্ত নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। শনিবার দুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন সেনপাড়া পর্বতা এলাকায়। ছবি: আশরাফুল আলম

এবারের বর্ষায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হতে পারে, এমন বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করেছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। জলাবদ্ধতার প্রতিকারে করণীয়ও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও জলাবদ্ধতার কারণগুলোর সমাধান হয়নি। কিছু কাজ শুরু হলেও সেগুলো শেষ হয়নি। এতে এই বর্ষাতেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হবে রাজধানীবাসীকে।

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণে গত ফেব্রুয়ারিতে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে একাধিক সভা হয়। সভায় এবারের বষা মৌসেুমেও রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জলাবদ্ধতা হতে পারে, এমন ১১টি এলাকা চিহ্নিত করে। ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কে এবার জলাবদ্ধতার ভোগান্তি তীব্র হবে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, উন্নয়নকাজের ফলে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও–তালতলা পর্যন্ত সড়কের পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওয়াসার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের পাশে ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন বসানো হবে। গত নভেম্বর থেকে সড়ক খোঁড়া নিয়ে চিঠি চালাচালি হয়। মার্চের মাঝামাঝি এসে কাজ শুরুর অনুমতি পায় ওয়াসা। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল সংস্থাটির।

ওয়াসার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক শওকত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার প্রভাবে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা চলে আসায় পুরো কাজ শেষ করা যায়নি। জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে আবার কাজ শুরু হবে। তবে শেওড়াপাড়া পয়েন্টে যাতে পানি না জমে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

>

রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে কিছু কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বাধাগ্রস্ত।

বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী ২৭ নম্বর পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ এই জলাশয় ভরাট করে। পরে ডিএনসিসির নির্দেশনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ ভরাট করা খাল পুনঃখনন করে দিয়েছে। তবে খালের পাশের সড়কের ফুটপাতে পানিনিষ্কাশনের নালা নির্মাণের কাজ এখনো চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর সচিবালয়, মতিঝিল, ধানমন্ডি ২৭ থেকে আড়ং ক্রসিং, কাজী আলাউদ্দিন রোডসহ পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এবার কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরাবাজার এলাকায় বড় ব্যাসের নালা নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি।

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান বলেন, সচিবালয়, মতিঝিল, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মতো এলাকাগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফকিরাপুল থেকে মতিঝিল হয়ে টিকাটুলি এবং আরও কয়েকটি এলাকায় কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে।

নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সংস্থাগুলোর মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান নিয়ে আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। তিনি আরও বলেন, বন্যায় নদীর পানির উচ্চতা বাড়লে রাজধানীর সড়কে জলাবদ্ধতা তীব্র হতে পারে। পানিনিষ্কাশনের পাম্পগুলো মেরামত ও এগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আপাতসমাধান হিসেবে নালা ও খালগুলো দ্রুত পরিষ্কার করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।