চিঠি আর সিসিটিভি ফুটেজে কাজী শহিদের সহযোগীদের খোঁজ

সাংসদ কাজী শহিদ । ফাইল ছবি
সাংসদ কাজী শহিদ । ফাইল ছবি

আটক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দপ্তরে তল্লাশি চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আর সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ করেছেন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করা চিঠি, চুক্তিপত্র ও সিসিটিভির ফুটেজের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তারা কাজী শহিদের সহযোগীদের খোঁজ পেয়েছেন। এরই ভিত্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কুয়েতের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন জনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

আল আরবির খবরে জানানো হয়, কাজী শহিদকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা কুয়েতের দুই নাগরিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে ১০ লাখ দিনারের (প্রায় ২৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা) চেক নিয়েছিলেন। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোতে লোক নিয়োগের চুক্তিতে তিনি ওই চেক নিয়েছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তারা কুয়েতের ওই নাগরিককে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। কারণ, বাংলাদেশের সাংসদের বিরুদ্ধে চলমান মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের তদন্তের স্বার্থে ওই লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাটা জরুরি।

কাজী শহিদের দপ্তর থেকে জব্দ করা কাগজপত্রে থেকে তদন্ত কর্মকর্তারা জেনেছেন, কুয়েতের এক ব্যবসায়ীর এজেন্ট সাংসদের কাছ থেকে ছয় লাখ দিনার (১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা) নিয়েছেন। অথচ সাংসদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির এত বিপুল অর্থের লেনদেন হলেও দুজনের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়েছে কি না, এর প্রমাণ মেলেনি।

কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দেশ দিয়ে কাজী শহিদের ১৩৮ কোটির টাকার একাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। কারণ, ওই ব্যাংকগুলো থেকে কুয়েত ও কুয়েতের বাইরে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

কুয়েত থেকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজী শহিদের যে ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গালফ ব্যাংক অব কুয়েতের একটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

আল কাবাসের রোববারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ জুন বাংলাদেশের সাংসদকে আটকের কয়েকদিন পর তাঁর প্রতিষ্ঠান কুয়েতিয়া মারাফিয়ার দপ্তরে তল্লাশি চালান তদন্ত কর্মকর্তারা। তাঁরা সেখানে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তল্লাশি চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আর সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ করেন। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করা চিঠি, চুক্তিপত্র আর সিসিটিভির ফুটেজের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তারা কাজী শহিদের মদদদাতাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হন। ওই সব তথ্যপ্রমানের ভিত্তিতে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্নজনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের সাংসদের দপ্তর থেকে জব্দ করা কাগজপত্রের মধ্যে কুয়েতের বিভিন্ন জায়গায় দপ্তরের বাড়িভাড়া, কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নেওয়া ভবনের ভাড়ার রশিদসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের রশিদও রয়েছে।

মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে তাঁর সেখানকার বাসা থেকে আটক করেন দেশটির সিআইডির কর্মকর্তারা। কাজী শহিদের বিরুদ্ধে আনা মামলার পরের শুনানির দিন ঠিক হয়েছে আগামী ৬ জুলাই।