মূল আসামি রূপম গ্রেপ্তার

বস্তায় ভরে লাশের তিনটি টুকরা বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে চার্লস রূপম। ছবি: সংগৃহীত
বস্তায় ভরে লাশের তিনটি টুকরা বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে চার্লস রূপম। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল হত্যায় মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এ তথ্য জানান।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ৫০ হাজার টাকার লোভে চার্লস রূপম নামের এক ব্যক্তি নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করেন হেলালকে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে পরে বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর বঁটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে কেটে একেক জায়গায় মৃতদেহের একেকটি অংশ ফেলে রেখে আসেন রূপম।

এ কাজে তাঁকে স্ত্রী ও শাশুড়ি সহযোগিতা করেন। ওই দুজনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা ইতিমধ্যে দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর থানা এলাকায় হেলালের দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত করে।

নিহত হেলাল নারায়ণগঞ্জের একটা মাদ্রাসায় ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি দক্ষিণখান থানা এলাকায় মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি মোবাইলের সিম, ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা, কলম, স্টেশনারি এবং খেলনাসামগ্রীর ব্যবসা করে আসছিলেন।

গ্রেপ্তার রূপম সরকার প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন যে পূর্বপরিচিত হেলালের কাছে অনেক টাকাপয়সা আছে ভেবে টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরবেলা ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে হেলালকে ব্যবহৃত ফটোস্ট্যাট মেশিন কিনতে যাওয়ার কথা বলে সরকারের বাসায় আসতে বলেন রূপম। বাসায় এলে রূপম ও তাঁর স্ত্রী শাহিনা আক্তার ওরফে মনি সরকার হেলালকে চা পান করতে দেন। চা তৈরি করার সময় রূপম চায়ের মধ্যে দুটি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেন। চা পানের এক পর্যায়ে হেলাল ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ডিস অ্যানটেনার তার গলায় স্বামী-স্ত্রী দুদিক থেকে টেনে টেনে হেলালকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর হেলালের পকেটে থাকা ২৫৩ টাকা, মোবাইল থেকে বিক্যাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার মধ্য থেকে ৪৩ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন। রাতের বেলায় শপিং ব্যাগে করে খণ্ডিত মাথাটি রেখে দেন ভূঁইয়া কবরস্থান-সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে।

মা রাশিদা আক্তারের কাছে ৩০ হাজার টাকা রেখে দেন রূপমের স্ত্রী মনি সরকার। স্বামী-স্ত্রী মিলে খণ্ডিত দেহের বাকি অংশগুলো একটি স্কুল ব্যাগে এবং পায়ের অংশ বস্তায় ভরে রাখেন। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টায় রূপম অটোরিকশায় করে বস্তা ও স্কুল ব্যাগটি নিয়ে গিয়ে উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সিসি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম ১৮ জুন রূপম স্ত্রী মনি সরকার এবং শাশুড়ি রাশিদা আক্তারকে আটক করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ দক্ষিণখানের গাওয়ার এলাকার একটি ডোবা-সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে যুবকের খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে। এই দুজনের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি মূল আসামি চার্লস রূপম কখন, কোথায়, কীভাবে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় গুম করে রেখেছিলেন, তা জানা যায়।

হত্যার পরে লুট করা টাকার অংশবিশেষ নিয়ে রূপম ঢাকা ও বগুড়ায় আত্মগোপন করে বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় ডিবি উত্তরের বিমানবন্দর টিম রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রূপমকে নিয়ে দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো সুইচগিয়ারটি ও সাত হাজার টাকা উদ্ধার করে ডিবি।

রূপম সরকারকে আদালতে পাঠিয়ে পুলিশ রিমান্ডে এনে আরও তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানায় পুলিশ।