চট্টগ্রামে চার চিকিৎসক দম্পতি করোনা আক্রান্ত

অধ্যাপক নীল কান্ত ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী
অধ্যাপক নীল কান্ত ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী

তিনটি শয্যায় তাঁরা শুয়ে আছেন। হাতে মুখে নল-যন্ত্রপাতি, কোনোটা অক্সিজেনের, কোনোটা খাবারের আবার কোনোটা স্যালাইনের। ওপরে শরীরের নানা মাত্রা নির্দেশক মনিটর। চিকিৎসক ও স্বজনেরা কিছুক্ষণ পরপর চোখ রাখেন তাতে। কোনো উন্নতি বা অবনতি হলো কি না। এই তিন ব্যক্তিই চিকিৎসক। করোনাকালে অন্যের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেরাই আজ করোনা আক্রান্ত।

এই তিন চিকিৎসক হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক নীল কান্ত ভট্টাচার্য, সহকারী অধ্যাপক সন্দীপন দাশ ও চিকিৎসা কর্মকর্তা অনীক চন্দ। এদের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। তিনি সহযোগী অধ্যাপক সমিরুল ইসলাম। কয়েক দিন আগে তাঁকে চমেক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে সরিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অনীক চন্দ ও তাঁর স্ত্রী
অনীক চন্দ ও তাঁর স্ত্রী

সমিরুলের ছেড়ে যাওয়া শয্যায় ১৫ জুন ভর্তি করা হয় অনীক চন্দকে। অনীক চমেক করোনা ওয়ার্ডে টানা সেবা দিয়েছেন। একই সময়ে হৃদরোগ বিভাগ ও ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রতিদিনই রোগীর সেবা দেন সন্দীপন দাশ। অর্থোপেডিকের সমিরুল ইসলাম করোনাকালীন একদিনও হাসপাতালে না এসে থাকেননি। বাদ দেননি অস্ত্রোপচারও। আর নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ নীলকান্ত ভট্টাচার্য বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেছেন। রোগীর মাধ্যমে তাঁরা সংক্রমিত, এটাই ধারণা।

অধ্যাপক নীলকান্ত চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন গত সোমবার। আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বুধবার। এর পরদিন বৃহস্পতিবার সন্দীপনকে হৃদরোগ বিভাগ থেকে আইসিইউতে আনা হয়।

করোনা ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাহেদ উদ্দিন ১৮ জুন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক নীলকান্ত ভট্টাচার্য আইসিইউতে চিকিৎসাধীন, পাশের শয্যায় আমাদের বন্ধু অনীক চন্দ চিকিৎসাধীন। একটু দূরে আর একটা শয্যায় শুয়ে আছেন আমাদের প্রিয় দাদা সন্দীপন দাশ, সহকারী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি। সবাইকে হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তিনজনই করোনাকালে চট্টগ্রামের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দুঃখের বিষয় তাদের পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত। তিনজন ভালো মানুষের জন্য অনেক অনেক দোয়া চাই।’

সন্দীপন দাশ ও তাঁর স্ত্রী
সন্দীপন দাশ ও তাঁর স্ত্রী

চিকিৎসকদের সুস্থতা কামনা করে যাচ্ছেন সহকর্মী, স্বজন আর তাঁদের সেবায় সুস্থ হয়ে ওঠা সাধারণ মানুষেরা। সন্দীপন দাশ আবার সংস্কৃতিকর্মী। বেহালা বাজাতে পারেন ভালো। তাঁর বেহালার বাজানোর একটি ভিডিও এবং ছবি দিয়ে ফেসবুকে স্বজন শুভানুধ্যায়ীরা রোগমুক্তি কামনা করছেন।

গত ১৫ জানুয়ারি ছিল অধ্যাপক নীলকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিন। এ উপলক্ষে ঘরোয়াভাবে কেক কাটা হয়। মাথায় বাচ্চাদের মতো জন্মদিনের টুপি দিয়ে কেক কাটেন এই অধ্যাপক। পাশে ছিলেন স্ত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য ও পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রীর ফেসবুক পেজে এই ছবিগুলো রয়েছে।

সবার আগে মে মাসের মাঝামাঝিতে আক্রান্ত হন সমিরুল ইসলাম। চট্টগ্রামে প্রথম প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয় তাঁকে। তিনি আগের চেয়ে এখন কিছুটা সুস্থ। তাঁর বিশ্বাস, তিনি সেরে উঠবেন। তাঁর ওপর অনেক মানুষের আশীর্বাদ রয়েছে।

সমিরুল ইসলাম।
সমিরুল ইসলাম।

শুধু নিজে নন, সমিরুল স্ত্রী সহকারী অধ্যাপক মোনা ইসলাম এবং দুই সন্তানও করোনায় আক্রান্ত। মোনা চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে করোনাকালীন কর্তব্য পালন করেন। তেমনিভাবে অপর তিনজনের স্ত্রীও কোভিড-১৯ পজিটিভ। তাঁরাও চিকিৎসক। সন্দীপনের স্ত্রী রূপা দত্ত কোভিড হাসপাতালখ্যাত জেনারেল হাসপাতালে শুরু থেকেই সেবা দিচ্ছেন। নীল কান্তের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কৃষ্ণা ভট্টাচার্য ও অনীকের স্ত্রী মনিকা চন্দ করোনাকালীন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।