করোনা-ব্যর্থতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি বিএনপির সাংসদের

বিএনপির সাংসদ হারুন-অর-রশীদ। ফাইল ছবি
বিএনপির সাংসদ হারুন-অর-রশীদ। ফাইল ছবি

চলতি বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন বিএনপির সাংসদ হারুন-অর-রশীদ। ওয়াকআউটের আগে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে হারুন-অর–রশীদকে ১২ মিনিট আলোচনার সুযোগ দেন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। শুরুতেই হারুন তাঁর সময় আরও বাড়িয়ে দেওয়ার আরজি জানান স্পিকারের কাছে।

হারুন-অর–রশীদ তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ দিয়ে। তখন স্পিকার তাঁকে থামিয়ে এভাবে শুরু করার কারণ জানতে চান। তখন হারুন-অর-রশিদ বলেন, তিনি এটা বলেছেন, তার কারণ আছে। বক্তব্যের শেষের দিকে তিনি তার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই বিষয়ে ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘এমনভাবে শুরু আমার সাতবারের সংসদ সদস্য জীবনে দেখিনি। আপনাকে (হারুন-অর রশীদ) অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে বিএনপির সাংসদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, করোনা দু–তিন বছরেও যাবে না। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিজি। তাহলে এই করোনা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটাকে মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার।’

এই পর্যায়ে হারুন-অর–রশীদ বলেন, জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারদলীয় সাংসদেরা হইচই শুরু করেন।

এ সময় হারুন বলেন, ‘হইচই করে লাভ নেই। চিল্লাচিল্লি করে কোনো লাভ হবে না। জনগণের কাছে বার্তা যাচ্ছে যে আপনারা সত্য তথ্যগুলো তুলে ধরা থেকে বঞ্চিত করছেন।’

এ পর্যায়ে হারুন-অর–রশীদের সময় শেষ হয়ে গেলে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। হারুন-অর–রশীদ মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন। এ সময় অন্য সদস্যরা হইচই করতে থাকেন।

এ সময় স্পিকার বলেন, ‘হইচইয়ের জন্য আমি নিজে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আপনি যে দুজন ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করেছেন, আমি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তাঁদের নাম উচ্চারণ করতে পারি না। কারণ দুজনই কনভিক্টেট। পার্লামেন্টে বসে কীভাবে কনভিক্টেটের বিষয়ে কথা বলতে পারি!’

হারুন-অর–রশীদ তাঁর বক্তব্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। এটাও সংসদের কার্যপ্রণালি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে জানান ডেপুটি স্পিকার।

এরপর হারুন-অর–রশীদের মাইক অন হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘সংসদ নেতার (প্রধানমন্ত্রী) কথায় আপনি আমাকে সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার কথার মধ্যে স্পিকার হয়ে বাধা দিয়েছেন। এটা দুঃখজনক। এ জন্য আমি ওয়াকআউট করছি। এরপরও তিনি হইচই করতে থাকেন।’

এ সময় ফজলে রাব্বী মিয়া সরকারদলীয় সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, ‘হারুন-অর-রশীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমি যথেষ্ট। আমি আনপার্লামেন্টারি কিছু হতে দেব না। এটা সরকারি দলের সাংসদ হলেও আমি ইন্টারেপ্ট করব।’

ওয়াকআউটের আগেই দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরে সংসদে থাকা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘সরকারের লোকজন, বিএমএ বলছে, করোনায় মৃত্যুর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এই দুঃসময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি কোনো কোভিড হাসপাতাল ভিজিট করেছেন? ১০ দিন ধরে ফোন করে ও বার্তা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাড়া মিলছে না। ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেন। কমিটমেন্ট আছে, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেন।’

হারুন-অর-রশীদ অভিযোগ করেন, সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। চাঁদাবাজি, শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ খারাপ ব্যক্তিরা দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই সংসদে এমন ব্যক্তি এসেছেন, যিনি মাদক পাচারের শীর্ষে। তিনি কীভাবে সংসদে এলেন? তাঁর স্ত্রী কীভাবে সংসদে এলেন? সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে সংসদে আসতে পারতেন না।

হারুন-অর-রশীদ বলেন, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ নসিহত দিচ্ছেন। সৎ হতে হবে। ১০ বছর ধরে শীর্ষ পদে আছেন তিনি। গত নির্বাচনে যাঁরা মানুষের আমানত নষ্ট করেছেন, এর জবাবদিহি করতে হবে না? এই পুলিশ দিয়ে সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশ আওয়ামী লীগের গোলাম ও দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।