গণমাধ্যমের কর-ভ্যাট কমানো দরকার: ইনু

হাসানুল হক ইনু (ফাইল ছবি)
হাসানুল হক ইনু (ফাইল ছবি)

করোনা পরিস্থিতির কারণে গণমাধ্যম ধুঁকছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এ অবস্থায় সরকারকে গণমাধ্যমের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামাতে হবে। নিউজপ্রিন্টের ওপর থেকে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করতে হবে। বিজ্ঞাপন আয়ের উৎসে কর ৪ শতাংশের স্থলে ২ শতাংশ করতে হবে। কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ আবগারি শুল্ক কমিয়ে শূন্য করতে হবে। টেলিকম সেক্টরে মোবাইলের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। ইন্টারনেটের ওপরের ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে।
বাজেটে বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সমালোচনা করে ইনু বলেন, সঠিকভাবে অর্থমন্ত্রী অগ্রাধিকার নির্ণয় করলেও খাতভিত্তিক বরাদ্দ গতানুগতিক। এমন কোনো বরাদ্দ নেই যেটা স্বাস্থ্যসেবার খোলনলচে বদলে দিয়ে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। নতুন দরিদ্র ও নতুন কর্মহারা কাজপ্রত্যাশী ২৬ লাখ লোককে একটি স্থায়ী দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। রাজস্ব খাত, ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার সংস্কারের দাবির বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।
ইনু বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং দুটি প্রকল্প মিলিয়ে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মূল বরাদ্দ ৫ দশমিক ১ শতাংশ। গতবার এটা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থ্যাৎ মূল বরাদ্দ কমে গেছে। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য খাতে তিনটি চাহিদা। কোভিড-১৯ মোকাবিলা করা, জিডিপির ৫ শতাংশ দিতে হবে এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ ব্যবস্থা এ বছরই নিতে হবে। কয়েক দিন পরে বোঝা যাবে। এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দে হবে না। আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।
১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই দাবি করে সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, এবার দরকার ছিল ছকের বাইরে একটা বাজেট। কিন্তু বাজেট থেকে মনে হচ্ছে দেশে করোনা বলে কিছু নেই। এটি অস্বাভাবিক সময়ের একটি স্বাভাবিক বাজেট মাত্র। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দেশ বাজেট তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এই সংকটের মধ্যেও বাজেট দিয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন।’
দেশে এখন অস্বাভাবিক সময় যাচ্ছে উল্লেখ করে জাসদ সভাপতি বলেন, করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া বাজেটের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ গতানুগতিক, গৎবাঁধা এবং ছকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশীয় শিল্প সুরক্ষাসহ কর খাতে কিছু ভালো প্রস্তাব থাকলেও বড় ধরনের কোনো সংস্কার প্রস্তাব নেই। দ্বার উন্মোচনকারী উদ্ভোবনী কিছু নেই। এবার দরকার ছিল ছকের বাইরে একটা বাজেট। কিন্তু বাজেট থেকে মনে হচ্ছে দেশে করোনা বলে কিছু নেই। করোনাও অভিঘাতও কিছু নেই। অস্বাভাবিক সময়ের একটি স্বাভাবিক বাজেট মাত্র।
সরকারকে উদ্দেশ করে ইনু বলেন, করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না। দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবিলা, অর্থনীতি সচল করা যাবে না। স্বচ্ছতা, সমন্বয়হীনতা ও অদক্ষতা দূর করে স্তরে স্তরে সুশাসন কায়েম করতে হবে। এলাকাভিত্তিক লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেরিতে হলেও লাল-সবুজ-হলুদ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে, এটা ভালো। কিন্তু এখানে ব্যবস্থাপনার কাজ তো করা হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে কাজ করবেন, সেই টিম নেই। কারিগরি নয়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ একটি জাতীয় কমিটি দরকার। জনস্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেবেন। পুলিশ প্রশাসন এলাকা পাহারা দেবে। এ জন্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আর তার জন্য এখনই থোক বরাদ্দ দরকার।
জাসদ সভাপতি বলেন, কৃষি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষি কমিশন গঠন করতে হবে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করতে হবে। কৃষি যন্ত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রণোদনা দিতে হবে। সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ডিজিটাল তথ্যভান্ডার গড়ে তুলে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে টাকা ধার করতে হবে। মানুষ বাঁচাতে হবে।
বাজেট বক্তব্যে কোভিড–১৯ মোকাবিলা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষা—এ তিনটি খাত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন হাসানুল হক ইনু।