কোয়ারেন্টিন বিড়ম্বনা

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

কোয়ারেন্টিনে থেকে কী করবেন, এই ভেবে অনেকেই খুব চিন্তিত আছেন। খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই কাছের কিছু বন্ধুবান্ধুবকেই এই সমস্যায় ভুগতে দেখছি প্রতিনিয়ত। তাই অনেকেই নিজের অজান্তেই কী করছেন নিজেও জানেন না। আমরা জানি অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আর কোনো কাজ না থাকার ফলেই আসলে এমন সব কর্মকাণ্ড। নিজেরা উদ্ভাবন করেছেন সময় কাটানোর কিছু উদ্ভট কৌশল। অনেকেই একজন আরেকজনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে, আবার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে অনেকেই ফেসবুকে ছবিসহ আরও অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস শেয়ার করছেন। অনেকেই আবার নিজের সময় অতিবাহিত করতে অদ্ভুত সব স্ট্যাটাস শেয়ার করছেন। যেমন: কেউ কেউ চাল থেকে ভাত হতে কত সময় লাগে তা গুনছেন, কেউ কেউ চাল আর ডাল মিশ্রিত করে তা আলাদা করছেন, কেউ আবার ফ্যানের সুইচ অফ করলে বন্ধ হতে কতক্ষণ সময় লাগে তা গুনছেন, আবার কেউ কেউ এক চামচে চিনির সংখ্যা কত তা পরিমাপ করছেন, আবার কেউবা র‍্যান্ডম মুরগি বা গরু ধরার খেলা খেলছেন। কেউ কেউ আবার কবুল নামক অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন অথবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের সঙ্গে পরিচয় কখন ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চাচ্ছেন। এভাবেই অদ্ভুত সব নতুন নতুন খেলা আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়তই।

কোনো কাজ না থাকলে এ রকম উদ্ভট চিন্তাভাবনা আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যেহেতু অবসর সময় পাচ্ছেন সময়গুলোকে কি একটু কাজে লাগানো যায় না? সব সময় কি এমন সময় পাওয়া যায়? একবার চিন্তা করুন সারা বছর যখন ব্যস্ততা থাকে তখন একটু অবসরের জন্য হা–হুতাশ করতে থাকেন। অথচ এখন যখন পাচ্ছেন এখন তার সঠিক ব্যবহার করছেন না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে অবসর সময়গুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবেন?
—সারা বছর অনেকেই পরিমাণমতো ঘুমানোর সময়টুকুও পান না। তাঁরা এই সময়টাতে পরিমাণমতো ঘুমাতে পারেন। পরিবারের সঙ্গে গল্প করে খুব ভালো সময় অতিবাহিত করতে পারেন।
—আমাদের অনেকেরই অনেক ধরনের প্রতিভা আছে। কেউ খুব ভালো রান্না করতে পারেন। এই সময়টাতে সবার প্রিয় কিছু রান্না করে পরিবারের সবাইকে খাওয়াতে পারেন।
—অনেকেই আছেন খুব ভালো গান গাইতে পারেন। এই সময়টায় নিজের গানের গলাটা আবারও ঝালিয়ে নিতে পারেন। চাইলে অনলাইনে এসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন। আবার অনেকে ভালো গিটার বাজাতে পারেন। চাইলে গিটারও অনুশীলন করতে পারেন। যেটা আমার অনেক বন্ধুই করছেন।
—অনেকেই খুব ভালো লিখতে পারেন। তাঁরা এই সময়টায় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফেসবুকে অথবা ডায়েরিতে লিখে অনুশীলন করতে পারেন।

অনেকেই বই পড়তে খুব পছন্দ করেন। এই সময়টায় পুরোনো বইগুলো আবার নতুন করে পড়তে পারেন। অথবা নতুন কোনো বইতে ঢুঁ মারতে পারেন। যেটা আমি করার চেষ্টা করছি।
অনেকেই মুভি দেখতে খুব পছন্দ করেন। পুরোনো মুভিগুলো দেখতে পারেন। অথবা এখন অনলাইন কিংবা নেটফ্লিক্সের যুগ। নতুন সিরিজ কিংবা মুভির অভাব নেই। তবে অবশ্যই ভালো মুভি সিলেক্ট করে দেখবেন। চাইলে মুভি দেখে মুভির রিভিউ ফেসবুকে লিখতে পারেন।
কেউ কেউ আছেন যাঁরা বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা চাইলে এই সময়টার খুব ভালো ব্যবহার করতে পারেন।

চাইলে এ ধরনের আরও অনেক কাজের কথাই লেখা যায়। আমি তো মাত্র অল্প কিছু উল্লেখ করলাম। তবে সবচেয়ে ভালো একটা কাজ চাইলে সবাই করতে পারেন। এই সময়টায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলুন। অনেকেই আছেন যাঁরা সময়ের অভাবে কোরআন ভালোভাবে চর্চা করতে পারেন না। এ সময়টায় প্রতিনিয়ত কোরআন পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। একটা নতুন গেম শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন যেকোনো একটি সুরা পড়ে অন্য বন্ধুদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন। অন্তত এভাবে হলেও কোরআন পড়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠবে।

সর্বোপরি একটা কথাই বলতে চাই। পারলে অযথা সময় নষ্ট না করে নিজের আশপাশের মানুষের কথা চিন্তা করুন। পারলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু পারেন সাহায্য করার চেষ্টা করুন। আর ঘরে অবস্থান করুন। খুব জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। গুজবে কান দেবেন না। গুজব ছড়াবেনও না। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন। ইনশা আল্লাহ আমরা খুব দ্রুতই এই সংকট কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব।

* শিক্ষার্থী, এম এস (জৈব রসায়ন), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]