ন্যায়বিচার পেতে পথে নামতে বাধ্য হয়েছি: সাংবাদিক পারুল

ন্যায়বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একাই প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করেন সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ন্যায়বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একাই প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করেন সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

যৌতুক দাবি ও ভ্রূণ হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে স্বামী সাংবাদিক রেজাউল করিমের (প্লাবন) বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম (পারুল)। মামলা করার পর পার হয়েছে ১ মাস ১৫ দিন। অভিযুক্ত আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। সাজিদা ইসলাম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় ন্যায়বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে একাই দাঁড়িয়েছেন সাজিদা ইসলাম।

আজ বুধবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন সাজিদা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে সরাসরি অন্য কেউ না দাঁড়ালেও সাজিদা ইসলামের কর্মস্থল দৈনিক সমকাল-এর দুজন সহকর্মীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা আশপাশেই ছিলেন বলে সাজিদা প্রথম আলোকে বলেছেন।

তবে বিচার চেয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক পারুলের ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকেই

তাঁর পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। অনেকেই এখনই রেজাউলকে গ্রেপ্তারের দাবি ও সরকারের ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ফেসবুকে যে ছবি পোস্ট করে পারুলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, সেই ছবিটি কার তোলা, সে ব্যাপারে কেউই কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

অবস্থান কর্মসূচি শেষে টেলিফোনে সাজিদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা করার পর এত দিন পার হলো। আসামি ঢাকা শহরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না। অন্যদিকে আসামি আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। যেকোনো দিন আমাকে মেরেও ফেলতে পারেন। আসামি প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্নভাবে আপসের প্রস্তাব পাঠানোর নামে রসিকতা করে চলছেন। আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছু সাংবাদিক নেতাও ‘‘সমঝোতা’’ করার কথা বলেই যাচ্ছেন। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।’

সাজিদা বলেন, ‘আমি সাংবাদিক হয়েও ন্যায়বিচারের জন্য পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। করোনার সময় ইচ্ছে করেই মানববন্ধন বা অন্য কোনো কর্মসূচি হাতে নিইনি। আমি চাই না আমার জন্য অন্য কেউ বিপদে পড়ুক। তবে আমার অবস্থানে থাকা একজন নারীকে যদি ন্যায়বিচার চেয়ে এভাবে ঘুরতে হয়, তাহলে বিচার চাওয়া অন্য নারীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে আমি আজ একাই দাঁড়িয়েছি। এরপর আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে হাতিরঝিল থানার সামনে দাঁড়াব। তারপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়াব। তাতেও কাজ না হলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে দাঁড়াব। তাতেও কাজ না হলে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করব।’

সাজিদা ইসলাম জানান, যৌতুক দাবি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি রেজাউল করিম এবং অন্য আসামি তাঁর মা-বাবা এবং দুই ভাই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় বাড়িতে অভিযান চালিয়েও পুলিশ নাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। ঢাকার মীরেরবাগের বাসায়ও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয় হাতিরঝিল থানা-পুলিশ।

যৌতুক দাবি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে গত ১১ মে হাতিরঝিল থানায় রেজাউল করিমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সমকাল-এর স্টাফ রিপোর্টার সাজিদা ইসলাম। ২ এপ্রিল যুগান্তর-এর স্টাফ রিপোর্টার রেজাউল করিমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে মারধর করলে সাজিদার গর্ভপাত হয়ে যায়। ৫ মে সাজিদা ইসলাম রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়ি গেলে সেখানেও মারধরের শিকার হন।

রেজাউল করিমের ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্থায়ী সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ সংগঠনটির সাবেক নারীবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাজিদা ইসলাম।