স্বজনের দেখা পেয়েছে সেই শিশুটি

সড়ক দুর্ঘটনার সময় মায়ের কোলে ছিল রহিমুল্লাহ (৬)। মা মারা গেলেও বেঁচে যায় শিশুটি। কিন্তু তাঁদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পরিবারের লোকজন জানতে পেরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে এসে শিশুটিকে শনাক্ত করেন। সেখানে তাকে পরিচর্যা করছেন বড় ভাই জাহাঙ্গীর। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। ছবি: প্রথম আলো
সড়ক দুর্ঘটনার সময় মায়ের কোলে ছিল রহিমুল্লাহ (৬)। মা মারা গেলেও বেঁচে যায় শিশুটি। কিন্তু তাঁদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পরিবারের লোকজন জানতে পেরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে এসে শিশুটিকে শনাক্ত করেন। সেখানে তাকে পরিচর্যা করছেন বড় ভাই জাহাঙ্গীর। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। ছবি: প্রথম আলো

সড়ক দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই শিশুটি (৬) অবশেষে স্বজনের দেখা পেয়েছে। খবর পেয়ে আজ বুধবার দুপুরে তার বড় ভাই হাসপাতালে শিশুটিকে শনাক্ত করতে ছুটে যান।

আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে আছে শিশুটি। পাশে বসে তার হাত-পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন এক তরুণ। সে সময় তরুণটি নিজের নাম জাহাঙ্গীর জানিয়ে বলেন, তিনি শিশুটির বড় ভাই।

জাহাঙ্গীর শিশুটির দিকে ইশারা করে বলেন, ওর নাম মো. রহিমুল্লাহ। তাঁদের মায়ের নাম রুনা আক্তার বানু। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রহিমুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রংপুরে চিকিৎসার জন্য মা বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁদের সন্ধান মিলছিল না। আজ বেলা ১১টার দিকে গ্রামের এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে রহিমুল্লাহর ছবি বের করে জাহাঙ্গীরকে দেখিয়ে বলেন, গতকাল রাতে বাড়ি ফেরার সময় তাঁর মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর ভাই রহিমুল্লাহ ঠাকুরগাঁও শহরের হাসপাতালে ভর্তি আছে।

এটা শুনেই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে জাহাঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। সেখানে মায়ের লাশের পাশে বাবাকে রেখে তিনি ছুটে আসেন ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে। হাসপাতালে তাঁকে দেখেই রহিমুল্লাহ চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মা হারানো শিশু রহিমুল্লাহর (৬) পাশে পরিচর্যায় তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো
সড়ক দুর্ঘটনায় মা হারানো শিশু রহিমুল্লাহর (৬) পাশে পরিচর্যায় তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

গতকাল রাতে ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী আঞ্চলিক সড়কের কাদশুকা এলাকায় ট্রাক ও থ্রি-হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় শিশুটির মা রুনা আক্তার বানু মারা গেলেও অল্পের জন্য বেঁচে যায় সে। কিন্তু তাঁদের কারওর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। শিশুটিকে প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের নারী ওয়ার্ডে এখন চিকিৎসা চলছে শিশুটির।

স্বজনদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটির খোঁজখবর রাখছিলেন ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শিশুটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে তার ভাই এসে যখন শিশুটিকে শনাক্ত করেন, তখন দুশ্চিন্তামুক্ত হই।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় মাকে হারানো শিশুটি এখন বিপদমুক্ত। তবুও তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। স্বজনদের পরিচর্যায় শিশুটি দ্রুত সেরে উঠবে।’

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান জানান, ‘দুর্ঘটনায় আহত শিশুটি ও তার মায়ের পরিবারের খোঁজ পাওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর শিশুটির মায়ের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’