করোনায় হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]


১২টার দিকে ডেঙ্গু নিধন কর্মসূচির মশানাশক ধোঁয়াযন্ত্র নিয়ে এক কর্মী এলেন পৌরসভা থেকে। ব্রুম ব্রুম আওয়াজে চারদিকে প্রকম্পন শুরু হয়ে গেছে। করোনার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুও এক বিরাট সমস্যা, ভয়ানকও বটে। গেল বছরেই ডেঙ্গুতে অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। যা-ই হোক, করোনার জেরে ডেঙ্গুর কথা যে প্রশাসন ভুলে যায়নি, তা দেখে এত অস্বস্তির ভিড়ে কিছুটা স্বস্তির বার্তা পেলাম।

নীলচে-সাদা ধোঁয়ায় চারপাশ ভরে গেছে। গন্ধটা যদিও একদম খারাপ না, কিন্তু মানবদেহের জন্য নিশ্চয়ই অপকারী, তাই মাস্কটা পরে নিলাম। ফারজানকেও মাস্ক পরতে বললাম। আম্মা আঁচল দিয়ে আর ছোট পি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিল। পুবদিকের জানালা দিয়ে সবাই মিলে নিচের বাগানে ধোঁয়া দেওয়া দেখলাম। মানুষের একটা ভালো জটলা পেকে গেছে বাগানের সামনের রাস্তায়। করোনার চিন্তা মাথা থেকে কিছুক্ষণের জন্য ঝেড়ে ফেলে সবাই এখন নির্দেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। যে যার মতো বোঝাচ্ছেন পৌরসভার ওই কর্মীকে।

প্রবীণ বাড়িওয়ালাও বাইরে এসে ইচ্ছেমতো চেঁচিয়ে গেলেন, মুখে মাস্ক পরা ছিল যদিও। তাঁর স্ত্রীও ঘরের ভেতর থেকে পৌরসভার ওই কর্মীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন, কিন্তু কী কারণে? কারণটা এই—ডেঙ্গুনিধক ভুল করে এই বাড়ি ডিঙিয়ে চলে গিয়েছিলেন, তাঁকে ফোন করে ডেকে আনতে হয়েছে।

দোতলার বারান্দায় বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আবার সেই ব্রুম ব্রুম আওয়াজ আসতে শুরু করল। পেছনে ফিরে দেখি, সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে গলির পুবদিকের ঢাল বেয়ে নেমে আসছেন সেই যোদ্ধারূপী কর্মী। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁকে আর যোদ্ধা মনে হলো না। তাকে মনে হলো ঠিক যেন হ্যামিলিনের সেই বাঁশিওয়ালা৷ হ্যামিলিনের ওই বাঁশিওয়ালার মতোই তাঁর পেছনে শিশুদের ঢল। কমপক্ষে ২০-২১ জন তো হবেই! শুধু শিশুই না, কিশোর থেকে শুরু করে দু-একজন তরুণকেও দেখলাম হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালারূপী পৌরসভার কর্মীর পিছু নিতে। এই দৃশ্য সরল চোখে দেখতে খুব মজার হলেও মানুষকে যে ‘দাবায়ে রাখা’ যাচ্ছে না—এই জিনিসটা কিন্তু একদমই ভালো লক্ষণ নয়। পরিস্থিতি ভয়ংকর! তক্ষুনি ঘর থেকে আম্মার ডাক এল, ঘড়িতে আড়াইটা বেজে গেছে ততক্ষণে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন শুরু হলো বলে।


*শিক্ষার্থী, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। [email protected]