ঢাকায় জোনভিত্তিক লকডাউন অবাস্তব, মনে করেন মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় জোনভিত্তিক লকডাউন একেবারেই অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যেখানে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে করোনা রোগীর সঠিক তথ্যই নেই, ডাটা-ই নেই, সেখানে কীভাবে ঢাকায় জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব? তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সারা দেশে করোনার বিস্তার ঘটেছে।

রাজধানীতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে করোনা সেলের আহ্বায়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ ও ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, করোনার প্রকৃত তথ্যও গুম করছে গুম-খুনের এই সরকার। ঢাকা শহরের কিছু কবরস্থানে লাশ দাফনের এ বছরের চিত্র ও গত বছরের চিত্র তুলনা করলেই বোঝা যায়। এ ছাড়া খোদ আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি হটলাইনে করোনা-সংক্রান্ত ফোন এসেছে ১ কোটি ২৭ লাখ। এ পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণ করলেই ধারণা পাওয়া যায়, প্রকৃত অর্থে দেশের কত মানুষ করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ বহন করছে।

বিএনপির মহাসচিব জানান, এ পর্যন্ত সারা দেশে তাঁর দলের ২৮৪ জন নেতা-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল দাবি করেন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলন করা হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পরে তা সংবাদ বুলেটিনে রূপ নেয়। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুসহ কিছু তথ্য দেওয়া হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকারি হিসাবেই গত দুই সপ্তাহ যাবত প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছে ৪১ জন। সারা দেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। লাশের মিছিলে যুক্ত হওয়া একেকজন মানুষ সরকারের কাছে কেবলই একটি সংখ্যা মাত্র। এমন অবস্থায় আপনি, আমি কেউই নিরাপদ নই।'

মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে করোনার সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখা নিয়ে গোলোযোগ, গার্মেন্টস খোলা নিয়ে নাটক, লকডাউন না দিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বমুখীর মধ্যে সাধারণ ছুটি বাতিল করা, হাসপাতাল নির্বাচন ও প্রস্তুতিতে কালক্ষেপণ, জনবল নিয়োগে বিলম্ব, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয় ও বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি, কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতা। এ সব কারণে সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। চীনের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলও বলে গেছে, বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে না।
গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে রাজনীতি

গণস্বাস্থ্যের আবিষ্কৃত কিট প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, পিজি হাসপাতাল বলছে, এই কিটের এন্টিবডি পরীক্ষার সফলতা ৭০ শতাংশ। পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সফলতাও ৭২ শতাংশের বেশি নয়। তাহলে কেন এই কিটের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এন্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে না। বরং এ নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে করোনা রোগীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এখন শোনা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে কিট আদমানির করতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু দেশে স্বল্পমূল্যে কিট থাকা সত্ত্বেও কেন বাইরে থেকে আনতে হবে।

টেস্ট কিটের অভাব, নমুনা সংগ্রহে হয়রানি

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে করোনার পরীক্ষা কেন্দ্র ৪৩টি জেলায় নেই। সারা দেশের ৬৬টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে, যার ৩৩টিই ঢাকায়। পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই, অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। অন্য দিকে টেস্ট কিটের অভাব এবং নমুনা সংগ্রহের হয়রানি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই হলো ধোঁকাবাজ আওয়ামী লীগের কথিত উন্নত দেশের চেহারা। তিনি বলেন, প্রথমে সরকার বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ৫০০টাকা নির্ধারণ করে দিলেও সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০০টাকা। তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

৫৪ লাখ পরিবারে বিএনপির ত্রাণ

গত ২০ মার্চ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি এবং দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে ৫৪ লাখ ‌১২ হাজার ৪১৬টি দুস্থ পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা করেছে। এতে ২ কোট ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৪ জন মানুষ উপকৃত হয়েছে। এছাড়া ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ড্যাব), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও দলের নেতৃবৃন্দ কয়েকলাখ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পিপি বিতরণ করেছেন।