মেঝে খুঁড়ে পাওয়া গেল দুটি গোখরা-শতাধিক বাচ্চা-ডিম

দুপুর ১২টায় নিজ ঘরে বিশ্রাম করছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎ ঘরের মেঝেতে কয়েকটি সাপের বাচ্চা ঘুরে বেড়াতে দেখেন। ভয়ে চিৎকার শুরু করেন তিনি। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। এরপর ঘরের মেঝে খুঁড়ে তাঁরা পান দুটি পরিপূর্ণ গোখরা সাপ এবং সাপের শতাধিক বাচ্চা ও ডিম। 

আজ শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার পারভাঙ্গুরা ইউনিয়নের রাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের বাড়িতে। সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন গ্রামবাসী। পরে সেগুলোকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
মৃত সাপ ও বাচ্চাগুলোর ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন পাবনার বন্য প্রাণীবিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস। তিনি জানান, সাপটির নাম গোখরা। অনেকেই বলেন, খড়ম পায়া বা খাইয়া গোগরা। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ। সাপটির প্রজননক্ষমতা বেশি। পৌনে ২০০ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ৭০ দিন। তবে নিজে গর্ত খুঁড়ে ডিম দেয় না। ইঁদুর বা অন্য প্রাণীর গর্তে বাসা বাঁধে।
এহসান আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালে গোখরা সাপ গর্তে থাকে। বর্ষা ও গরমে গর্ত থেকে বের হয়। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন সাপ দেখা যাচ্ছে। সাধারণত এই সাপ কামড়ায় না। তবে ভয় পেলে ও আক্রান্ত হলে ছোবল মারে। তাঁর মতে, পিটিয়ে না মেরে সাপ দেখলে স্থানীয় সাপুড়েদের খবর দেওয়া উচিত।
গ্রামের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চলনবিল বিস্তৃত গ্রামটির বিভিন্ন জলাশয়ে বর্ষার পানি আসতে শুরু করেছে। আশপাশের ফসলের মাঠ ডুবে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে নিচু এলাকা ডুবে গেছে। ফলে মাঝেমধ্যেই গ্রামের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও বসতবাড়িতে সাপ দেখা যাচ্ছে। দুপুরে গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান নিজ ঘরে বিশ্রাম করছিলেন। তিনি প্রথমে কয়েকটি সাপের বাচ্চা দেখতে পান। পরে তাঁর ডাকে গ্রামের লোকজন ছুটে এসে ঘরের কোনায় একটি গর্ত দেখতে পান। গর্তটির মুখ ধরেই খুঁড়তে শুরু করেন গ্রামবাসী। পরে গর্তের মধ্য থেকে একে একে দুটি পরিপূর্ণ বড় সাপ, শতাধিক সাপের বাচ্চা ও ২৮টি সাপের ডিম উদ্ধার করা হয়। গর্ত খোঁড়ার সময়ই গ্রামবাসী ছোট-বড় সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
পারভাঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শরিফুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ সাপ দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্ক ও ভয় থেকেই তাঁরা সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন। পরে ওই বাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোতে এমন গর্ত আছে কি না, তা খুঁজে দেখা হয়েছে। তবে একসঙ্গে এতগুলো সাপ দেখে গ্রামের লোকজন এখন সাপ আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।