কাঁচাবাজারে মাস্কে উদাসীনতা, সামাজিক দূরত্বও মানছে না

সংক্রমণের বড় ঝুঁকি তৈরি করছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনেক সবজি বিক্রেতা মুখে ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। গতকাল দুপুরে মিরপুর ১ নম্বরের শাহ আলী সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে।  ছবি: আশরাফুল আলম
সংক্রমণের বড় ঝুঁকি তৈরি করছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনেক সবজি বিক্রেতা মুখে ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। গতকাল দুপুরে মিরপুর ১ নম্বরের শাহ আলী সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে। ছবি: আশরাফুল আলম

গতকাল শুক্রবার সকালে মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলী সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস, ফল, সবজি, মুদিদোকানসহ ১০০টি দোকান ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। তাদে দেখা যায়, ৬৩ জন বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। ৯ জনের মুখে মাস্ক থাকলেও সেটি থুতনিতে নামানো। বাকি ২৮ জন ব্যবসায়ী অবশ্য ঠিকভাবেই মাস্ক পরে ছিলেন। বাজারে আসা ক্রেতাদের অনেকের মুখেও মাস্ক ছিল না। অথচ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাইরে চলাচল করার সময় মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

গতকাল বেলা ১১টায় মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথ নেই। মাছবাজার লোকে লোকারণ্য। দু-একজন বাদে কোনো মাছ বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। ফলের দোকানের অধিকাংশ বিক্রেতাই বয়সে তরুণ, তাঁদের কারও মুখে মাস্ক দেখা গেল না। বাজারের মুদিদোকান সানিয়া জেনারেল স্টোরের দোকানদার নয়ন মাঝি বললেন, গরমের মধ্যে সব সময় মাস্ক পরে থাকাটা কষ্টকর। আর মাস্ক পরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতেও সমস্যা হয়। দোকানের সামনে মালপত্র থাকায় ক্রেতারা একবারে কাছাকাছিও আসেন না।

শাহ আলী সিটি করপোরেশন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে লোকজন সচেতন নয়। বাজার সমিতির পক্ষ থেকে দোকানদারদের এক হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। বারবার বলার পরেও মাস্ক পরানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে তো জোর খাটানো সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

গত ৩০ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঘোষণায় বলা হয়, কোভিড–১৯ সংক্রমণের মধ্যে বাড়ির বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কোনো ব্যক্তি এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সংক্রমণ আইন–২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাস্ক না পরে বাইরে চলাচল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কেরপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, জনগণকে জোর করে সচেতন করা সম্ভব নয়। বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা মাস্ক ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটি দেখভালে সিটি করপোরেশনের আপাতত কোনো উদ্যোগ নেই। মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগ হাটবাজারগুলো খোলা স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নির্দেশ মোতাবেক ঢাকার দুই সিটির ২৮টি কাঁচাবাজারের মধ্যে ২৪টি খোলা জায়গায় সরানো হয়। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ছুটি শেষে অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় এবং গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় বাজারগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে আবার মূল বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গতকাল সকালে মোহাম্মদপুর ক্যাম্পের বাজারে গিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাজারে কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাজারে এসেছেন, বিক্রেতাদের মুখেও মাস্ক নেই। বাধ্য হয়ে একটা সুপারশপে যাই। সেখানেও অনেক ভিড়। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির তৈরি করা নির্দেশনামূলক পুস্তকে বাজারগুলোর জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, বাজারের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা থাকা, কেনাকাটার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বাজার বন্ধের পর জীবাণুমুক্ত করা অন্যতম।

তবে কারিগরি কমিটির নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনো বাজারেই। কল্যাণপুর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই কেনাবেচা চলছে। প্রবেশমুখে নেই তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা। ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না।

সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি কমিটির প্রতিটি নির্দেশনাই কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজারগুলোকে যতটা সম্ভব উন্মুক্ত জায়গাতেই বসাতে হবে।