বগুড়ায় কোভিডে ৪৭ মৃত্যু, ৪৬-ই চলতি মাসে

বগুড়ায় সরকারি হিসাবে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি জুন মাসে। মোট মৃত্যুর প্রায় ৯৮ শতাংশই হয়েছে এই সময়ে। শেষ ১ সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। মোট মৃত্যুর ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ঘটেছে গত ১ সপ্তাহে। জেলায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ১ এপ্রিল।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

তবে হাসপাতালগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সরকারি হিসাবের গরমিল রয়েছে। বগুড়ায় কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ৩টি হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, মৃত্যুর সংখ্যা ৫১। এর বাইরে বেসরকারি সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়ায় বাসায় মারা যাওয়া করোনাভাইরাস পজিটিভ ১৭ জনের লাশ দাফন–সৎকার করেছে তারা। এই তথ্য যুক্ত করলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা হয় ৬৮ জন। আর করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর–শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ৪০ জন।


বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২৬ জুন পর্যন্ত জেলায় সরকারি হিসাবে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। তিনি বলেন, জেলার বাইরের হাসপাতালে ও বাড়িতে (অনিবন্ধিত) মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের জেলার তালিকায় ধরা হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতালে কোভিডে মৃত্যু হলেও জেলার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় প্রথমদিকে কয়েকজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণে পরিষ্কার নীতিমালা পাঠানো হয়নি। এ কারণে ‘নিবন্ধিত মৃত্যু’ ছাড়া নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে সরকারি হিসাবের বাইরেও মৃত্যুর সংখ্যা থাকতে পারে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, জেলায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ১ এপ্রিল। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করে ৩ এপ্রিল। ওই ব্যক্তি অন্য জেলার ছিলেন। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় বগুড়ার রাস্তায় ফেলে যাওয়া হয়। জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রথম ১৫ এপ্রিল পুলিশের এক সদস্য কোভিডে আক্রান্ত হন। ২১ এপ্রিল জেলা লকডাউন করা হয়। ৯ মে পর্যন্ত আক্রান্ত হন ৩৭ জন। ঈদে মার্কেট–বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের পর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ।
গতকাল পর্যন্ত জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৯ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৩১২ জনই সংক্রমিত হয়েছেন চলতি মাসে। মোট সংক্রমণের ৮৬ দশমিক ৬২ শতাংশই হয়েছে এই সময়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ৮৩২ জন পুরুষ, ৬৯০ জন নারী এবং ১৪৭ জন শিশু।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১৫ জন।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তাঁর হাসপাতালে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের হাসপাতালে এ পর্যন্ত কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বগুড়ার সংগঠক মিজানুর রহমান বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নথিভুক্ত ছাড়াও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া দুজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যাওয়া দুজন, রাজারবাগ হাসপাতাল, শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, পালস জেনারেল হাসপাতাল, এভারকেয়ার (অ্যাপোলো) হাসপাতালে মারা যাওয়া বেশ কয়েকজনের লাশ দাফন করেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। বাড়িতেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।