দুর্গম গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর পাশে 'প্রজেক্ট হাসিমুখ'

দরিদ্র পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে প্রজেক্ট হাসিমুখের প্রস্তুতি। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ছিকামহলে। ছবি: প্রথম আলো
দরিদ্র পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে প্রজেক্ট হাসিমুখের প্রস্তুতি। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ছিকামহলে। ছবি: প্রথম আলো

দুর্গম, পাহাড়ি-প্রত্যন্ত এক গ্রাম বোবারথল। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলাতে পড়েছে এই গ্রামটি। সেই গ্রামে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন আলিম বেগম (৫০)। প্রায় বছর দুই আগে স্বামী মারা গেছেন। কোনো ছেলেসন্তান নেই। চার মেয়ে তাঁর। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুই মেয়ে নিয়ে পাড়া–প্রতিবেশীদের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোমতে টেনেটুনে চলছে সংসার। কিন্তু করোনাভাইরাস সংকট আরও অনেকের মতো তাঁকেও বিপদে ফেলেছে। সংসার যেন আর চলতেই চায় না। যাঁরা বিপদে-আপদে তাঁর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়াতেন, সেই তাঁরাও ভালো নেই।

আলিম বেগমের দুর্দশার কথা জানতে পেরে হঠাৎ একদিন কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর বাড়িতে চাল, ডাল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, মরিচ, হলুদ ও সাবান নিয়ে হাজির। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন এই নারী। ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে সমবেত কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী এ রকম দুর্গম এলাকা ও বিভিন্ন স্থানের ১৬০টি পরিবারকে খুঁজে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্যসহায়তা।

প্রজেক্ট হাসিমুখ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা পিসি হাইস্কুলের ২০১৩ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপে তাঁরা ১১ জুন করোনাভাইরাসের কারণে সংকটে পড়া মানুষের জন্য কিছু করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা সবাই একমত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। আয়োজনের একটি ব্যানার নাম দেন ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’। ১১ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত তাঁরা পরিচিত ও শুভান্যুধায়ীদের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর তাঁরা মাঠে নামেন অসহায়-বিপন্ন পরিবারের খোঁজে। খুঁজে পান দুর্গম স্থান বোবারথলের আলিম বেগমকে। ২৩ ও ২৪ জুন এই দুই দিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আলিম বেগমের মতো দরিদ্র ও অসহায় ১৬০টি পরিবারকে তাঁরা খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। প্রতিটি পরিবারকে ১২ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, তিন কেজি আলু, এক কেজি ছোলা, দুই কেজি পেঁয়াজ, এক লিটার তেল, এক কেজি লবণ, মরিচ, হলুদ ও সাবান দেওয়া হয়েছে।

প্রজেক্ট হাসিমুখের উদ্যোক্তা নয়ন ইসলাম ও আসিফ মোক্তাদির বলেন, দেশ-বিদেশে থাকা সব বন্ধু মিলে মাত্র ৯ দিনে দেড় লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেক আত্মীয়স্বজনও টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। সবাই যে এত দ্রুত সাড়া দেবেন, তা কল্পনাও করেননি। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবার উচিত এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাহলে মানুষকে আর না খেয়ে থাকতে হবে না।

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্দিনে পিসি হাইস্কুলের ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা অনেক দুর্গম এলাকায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তাঁদের এই কাজ অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’