ফরিদপুরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা

ফরিদপুরে গত ১৭ দিনে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১১৪ জন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রথম ৫৭ দিনে শনাক্তের সংখ্যার তুলনায় এটা দ্বিগুণের বেশি। জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তৎপর হয়েছে। তারা প্রজ্ঞাপন জারি করে ফরিদপুর পৌরসভার কয়েকটি মহল্লাসহ বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি।

ফরিদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৪ এপ্রিল। ওই দিন নগরকান্দার পডাঙ্গি ইউনিয়নের দুটি গ্রামে দুজন করোনা পজিটিভ হন। দুজনই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর ৯ জুন পর্যন্ত ৫৭ দিনে এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয় ৫৫২ জনের। কিন্তু গত ১০ জুন থেকে করোনা শনাক্তের ক্ষেত্রে যেন উল্লম্ফন ঘটে। ১০ জুন থেকে গতকাল ২৬ জুন পর্যন্ত এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয় আরও ১ হাজার ১১৪ জনের। অর্থাৎ প্রথম শনাক্তের দিন থেকে ৫৭ দিনে যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার দ্বিগুণ হয়েছে তার পরের মাত্র ১৭ দিনে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৬৬ জনের।

এই পরিস্থিতিতে জেলায় গত ১৫ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক দিনে ১০২ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ ও ২৩ জুন। ২২ জুন শনাক্ত হয়েছিল ৮৪ জন। সবশেষ শুক্রবার (২৬ জুন) নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৯০ জন।

জেলায় মোট শনাক্ত ১ হাজার ৬৬৬ জনের মধ্যে ফরিদপুর সদরে রয়েছেন ৬৬৮ জন, ভাঙ্গায় ৩০০, বোয়ালমারীতে ২৩১, সদরপুরে ১২০, নগরকান্দায় ১০৪, চরভদ্রাসনে ৮২, সালথায় ৫৮, আলফাডাঙ্গায় ৫৬ ও মধুখালীতে ৪৭ জন।

ফরিদপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত ২৬৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে আক্রান্তের মধ্যে ১৬০ জন হাসপাতালে ও ১ হাজার ১০৬ জন বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত এ জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫ মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীর প্রয়োজন হলে জানামাত্রই আক্রান্তের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফরিদপুর পৌরসভার কোনো কোনো এলাকা রেড জোন ঘোষণা করলেও আমরা আজ শনিবার পর্যন্ত তা কার্যকর করিনি। জীবনের পাশাপাশি জীবিকার বিষয়টিও ভাবছি আমরা।’

এদিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ডেটাবেইসের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ভাঙ্গার পাঁচটি ওয়ার্ড রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ফরিদপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাসহ করোনাপ্রবণ এলাকাগুলো রেড জোন ঘোষণার প্রক্রিয়া আমার শুরু করেছি। আমাদের প্রস্তুতি শেষ হলেই রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।’