সর্বশেষ সুযোগটিও হাতছাড়া হলে 'বড় মূল্য' দিতে হবে

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ
অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। আবার যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তা–ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। সমস্যাটিকে দূরদৃষ্টিতে না দেখে ক্ষীণদৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণের এলাকাভিত্তিক ‘হটস্পট’গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিন্তু এর বাস্তবায়নও সেভাবে চোখে পড়ছে না। এটি করতে গিয়ে যদি সময় নষ্ট করা হয় তাহলে এ ধরনের মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত আছে।

যেসব দেশ দ্রুততার সঙ্গে ও যথাযথভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করেছে সেসব দেশ সফল হয়েছে। আর যেসব দেশ আটঘাট বেঁধে নামেনি, সেসব দেশকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইরান রয়েছে। পাশের দেশ ভারতও সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দেশেও ঠিক তা–ই হচ্ছে। আগে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারিনি। এখনো যদি সারা দেশের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে একসঙ্গে ও সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারি তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সফল হওয়া যাবে না।

সংক্রমণ বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙে চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মাধ্যমে আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলাম। এই প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনীসহ অনেকেই জড়িত। যার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত ছিল স্বাস্থ্য বিভাগের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর)। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না, নেতৃত্বেও ঘাটতি আছে।

মনে রাখতে হবে, এটি জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা। তাই সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, স্বাস্থ্য বিভাগকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে ঘাটতি থাকায় যে যার মতো করে কাজ করছে, ফলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আগেও যে যার মতো করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ), আইসোলেশন (বিচ্ছিন্নকরণ), লকডাউনসহ (অবরুদ্ধ অবস্থা) সব কাজই করেছে, কিন্তু সমন্বিত না হওয়ায় ফল পাওয়া যায়নি।

এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত কার্যকর নেতৃত্ব দেওয়া। এলাকাভেদে আক্রন্তের সব তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগে আছে। তাই তাদের উচিত অবিলম্বে সংক্রমণের হার অনুযায়ী লাল-হলুদ-সবুজ এলাকা চিহ্নিত করা। এরপর লাল চিহ্নিত এলাকায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু করতে হবে। কোনোভাবেই যাতে এই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে না পড়ে।

এই কাজটি করতে না করলে ব্যাপক সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বশেষ সুযোগটিও হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। এটি হাতছাড়া হলে আমাদের ‘বড় মূল্য’ দিতে হতে পারে। এর ফলে যা হবে তা হচ্ছে, দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন চিকিৎসার চাহিদা এত বেশি বেড়ে যাবে যে তা আর কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।