শিকলবন্দী সেই কিশোরীকে উদ্ধার, বাবা কারাগারে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সেই কিশোরীকে নিজ বাড়ি থেকে শিকলবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে সমবয়সী কিশোরকে বিয়ে করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কিশোরীর বাবা কিশোর, কিশোরের বাবাসহ ১৪ জনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেন। আর মেয়েকে নিজ বাড়িতে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে আটকে রাখেন।

এ নিয়ে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর প্রথম আলো অনলাইনে ‘কিশোর-কিশোরীর প্রেম-বিয়ে, অতঃপর...’  শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে শিকলবন্দী অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার বাবাকে আটক করা হয়।
প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম। তিনি জানান, বাবার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের সংশোধিত শিশু আইনের ৭০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার কিশোরী আজ রোববার বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বাবাকে। রোববার বিকেলে বাবা ও মেয়েকে আদালতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরীর বাবা আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নিরাপদে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আদালতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করতে পারেননি। উপরন্তু শিকলে বেঁধে ঘরবন্দী করে প্রায় এক মাস ধরে শারীরিক–মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোর–কিশোরী স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের প্রেমে পরিবারের অমত থাকায় মার্চের শুরুতে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং বিয়ে করে। কিশোরীর বাবা অপহরণের মামলা করার পর পুলিশ গত ৩০ মে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং কিশোর ও তার বাবাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। আর কিশোরীকে দেওয়া হয় বাবার হেফাজতে। গত ২৪ জুন কিশোর জামিনে মুক্ত হয়। পরে সে গতকাল শনিবার মুঠোফোনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ করে।

ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গভীর রাতে পুলিশের দল নিয়ে ওই কিশোরীর বাড়িতে যান তিনি। পুলিশ পরিচয়ে বাড়ির প্রধান ফটকে টোকা দেওয়ার পর কিশোরীর বাবা দরজা খুলে দেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েকে শিকলবন্দী করে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে পুলিশ পাশের কক্ষে গিয়ে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায় কিশোরীকে। শিকলটি খাটের সঙ্গে বাঁধা ছিল।

ওসি জানান, বাবাকে পাশের কক্ষে পাঠানোর পর তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেয় মেয়েটি। এ সময় শরীরের নানা জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন দেখায় মেয়েটি। তার বাঁ হাতে শিকল বাঁধার চিহ্ন রয়েছে। পরে মেয়েটির দাদির সহায়তায় বাঁ হাতে বেঁধে রাখা শিকলটিও উদ্ধার করে পুলিশ। রাতেই উদ্ধার করে কিশোরীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মো. রবিউল করিম বলেন, কিশোরী মেয়েটির বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে দীর্ঘদিন ধরে শিকল পরিয়ে রাখায় কালো দাগ পড়ে গেছে। তা ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেক দিন ঘরবন্দী থাকায় এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটি। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও ভালো পরিবেশ না পেলে ভবিষ্যতে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে কোনো মানুষকেই শিকলে বেঁধে ঘরবন্দী করে রাখার সুযোগ নেই। কিশোরীর বাবা সেই অমানবিক কাজটি করেছেন। মেয়েটিকে উদ্ধার, এ–সংক্রান্ত মামলা এবং বাবাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর কাজটি যথাসময়ে করেছে পুলিশ।

ওসি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে কিশোরীকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করার ঘটনার বিচার ও কিশোরীর নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে উদ্ধার করে আদালতে নেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে তাকে রাজশাহীতে সেফহোমে পাঠানো হয়েছে।  কিশোরীর বাবাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’