সুরক্ষাসামগ্রীর দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাঁদের পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রীর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এই অবস্থায় সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের দাবিসহ আট দফা দাবিতে আজ রোববার দুপুর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে গেছেন। এ ব্যাপারে তাঁরা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে তাঁদের দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা কাজে যোগদান না করে কোয়ারেন্টিনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে তাঁরা বলেছেন, তাঁরা হাসপাতালে ২০২০-২১ সেশনের ইন্টার্ন চিকিৎসক। তাঁরা সব পিছুটান উপেক্ষা করে গত ২৩ মার্চ থেকে সব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করায় ও বেশি হারে সংক্রমণ বেড়ে চলায় তাঁদের পাঁচজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর পেছনে চিকিৎসকদের যথাযথ সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবই মূলত দায়ী। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ সাড়া না পাওয়ায় এবার তাঁরা আট দফা দাবি পেশ করছেন।

এই আট দফা দাবির মধ্যে প্রথম দাবি—সংক্রমিত হওয়ার পর প্রত্যেক ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য ন্যূনতম সুযোগ–সুবিধা, যেমন: ছেলে ও মেয়ে চিকিৎসকের জন্য আলাদা সুনির্দিষ্ট ও মানসম্মত থাকার জায়গা, মানসম্পন্ন খাবার, পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রয়োজনবোধে হাই ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি (এইচএফওটি) ও আইসিইউ সাপোর্টের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি—কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে বর্তমানে সব রোগীকেই কোভিড-১৯ ‘পজিটিভ’ ধরে কাজ করতে হবে। প্রায় সব ইন্টার্ন চিকিৎসককে ছয়টি করে এন-৯৫ মাস্ক দুই মাসের জন্য রোটেশন করে পরার জন্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত ডাবল গ্লাভস-পিপিই, ফেসশিল্ড, হেক্সিসল (স্যানিটাইজার) প্রদান করতে হবে।

তৃতীয়ত, এই ক্রান্তিকালে মূল ভাতার সঙ্গে ঝুঁকিভাতা হিসেবে মূল ভাতার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ প্রতি মাসে প্রদান করতে হবে। চতুর্থ দাবি—ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের মিডলেভেল চিকিৎসকদের প্রতিদিন সশরীরে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পঞ্চম দাবি—একসঙ্গে সব ইন্টার্ন চিকিৎসককে ব্যবহার না করে যথাযথভাবে বিন্যাস করে একটানা ৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

ছয় নম্বর দাবি—জরুরি বিভাগ থেকে প্রত্যেক রোগীকে ভালোভাবে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সাত নম্বর দাবি—হাসপাতালের অভ্যন্তরে একজন রোগীর সঙ্গে দুজনের বেশি স্বজনের প্রবেশ রোধ করতে হবে। আর ওয়ার্ডের ভেতরে একই সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন অবস্থান করতে পারবেন না। শেষ দাবি—প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য অন্তত একটি ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ও ডিজিটাল বিপি মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই স্মারকলিপিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষর করেছেন। কর্মবিরতির কর্মসূচির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনন কান্তি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, বর্তমানে তিনি নিজেও করোনা পজিটিভ। তিনি বলেন, তাঁরা আট দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে গেছেন। তবে রোগীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য ভর্তি ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজ করছেন। ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরাও সঙ্গে রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌসের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনিও ফোন ধরেননি।